কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
এই প্রথম পর্যটন নগরী কুয়াকাটা সৈকতে ঈদে পর্যটক শুন্যতা দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর ঈদের এমন সময় আবাসিক হোটেল মোটেল গুলোতে পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকতো। রাত্রিযাপনের জন্য অগ্রিম বুকিং দিয়েও পর্যটকদের রুম সংকটে ভূগতে দেখা গেছে। সেখানে এ বছর আবাসিক হোটেল গুলো রয়েছে তালা বদ্ধ। খাবার হোটেল,ঝিনুকের দোকান,কাকড়া ফ্রাইয়ের দোকান সহ পর্যটনমুখী ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা ঘরে বসে দিন গুনছে কবে এমন পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। পর্যটনমুখী ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ জানান গত ২০ বছরের মধ্যে রমজানের ঈদের সময় পর্যটক শুন্য কুয়াকাটা তারা আর দেখেনি। প্রতিবছর ঈদের সময় কুয়াকাটা সৈকতে সাজ সজ্জা ও আলোক সজ্জায় জলমল করতো। সেখানে এখন সন্ধা নামলেই ভূতুরে অবস্থা। হোটেল মোটেল গুলো নানা রঙ্গে সাজানো থাকতো। সেখানে এখন উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
চিরচেনা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এখন যেন স্থানীয়দের কাছেই অচেনা লাগছে। জনমানবহীন এমন সমুদ্র সৈকত বিগত বিশ বছরে স্থানীয়রা দেখেনি। জনমানবহীন সৈকতের পুর্ব-পশ্চিমে বালিয়ারী ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না।
নভেল করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে পর্যটকদের ভ্রমনে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারনে পর্যটক শুন্য হয়ে গেছে কুয়াকাটার সৈকতে। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমে দুই চারজন স্থানীয় মানুষ ছাড়া কোন পর্যটকের পদচারনা নেই। নেই স্থানীয় মানুষেরও কোলাহল। পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীণ হয়েছে হোটেল মোটেল,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সহ কুয়াকাটায় অবস্থানরত ট্যুর অপারেটর ও ট্যুরিষ্ট গাইডরা। বেকার হয়ে পরেছে পর্যটনমুখী স্বল্প আয়ের মানুষগুলো।
সন্ধ্যার পরে মানুষ শুন্য কুয়াকাটা সৈকতে নামলে গা ছম ছম করে। নেই আলোক সজ্জা,মরণব্যাধি, ঘাতক করোনা প্রতিরোধে সরকারের সর্বোচ্চ সতর্কতার কারণে কুয়াকাটার এমন দৃশ্য বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামায় পর্যটন নির্ভর হাজার হাজার ব্যসায়ীসহ সাধারণ মানুষ হতাশা ব্যক্ত করেছেন। দীর্ঘ সৈকত জুড়ে এখন বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা। কোথাও নেই পর্যটকের কোলাহল।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গেল ১৮মার্চ (বুধবার) পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কুয়াকাটায় সৈকতে পর্যটদের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আবাসিক হোটেল মোটেল সহ সকল বিনোদন কেন্দ্র গুলো। একই সঙ্গে সৈকতের সকল দোকানপাট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকেই পর্যটক শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। পর্যটকদের ভ্রমনে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় হোটেল-মোটেলসহ খাবার রেষ্টুরেন্টগুলো বন্ধ রয়েছে।
আবাসিক হোটেল সৈকতের মালিক জিয়াউর রহমান শেখ বলেন, আবাসিক হোটেল ব্যবসা শুরু করার পর এই প্রথম রমজানের ঈদে পর্যটক শুণ্য কুয়াকাটা দেখেছেন তিনি। গত ২৫ বছরে পর্যটক শুন্য কুয়াকাটার এমন চিত্র তার চোখে পড়েনি। তিনি বলেন, এমন সময় পর্যটকরা রুমের জন্য হোটেলে ভীড় করত। করোনার কারণে এবছর হোটেল তালা বদ্ধ রেখে অলস সময় পার করছেন।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, কুয়াকাটার জীবনে রমজানের ঈদে পর্যটক শুন্য কুয়াকাটা এই প্রথম দেখেছেন তিনি। পর্যটক শুন্য সৈকত দেখে নিজের চোখকে তিনি বিশ্বাস করতে পারছে না। পর্যটক ছাড়াও স্থানীয় নারী শিশু সহ হাজার মানুষ ঈদের দু’য়েক দিন আগে থেকে ভীড় জমাতো সৈকতে। সেখানে ভিন্ন চিত্র বিরাজ করছে। তুষার আরো জানান,করোনা ভাইরাসের কারনে পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ট্যুরিষ্ট গাইড,পর্যটন নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ট্যুরিষ্টদের উপর নির্ভরশীল নিন্ম আয়ের মানুষ গুলোর কর্মহীন হয়ে পড়ায় সংসার চালাবেন কিভাবে এনিয়ে দূঃসচিন্তায় রয়েছে তারা। নিন্ম মধ্যবিত্ত পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীদের এবারের ঈদ বিষন্নতায় ভরা। মনে কোন আনন্দ নেই।
এমবি/এমআর