কাউখালী(পিরোজপুর)সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে পিরোজপুরের কাউখালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্তসহ গাছপালা.পানের বরজ ও কৃষির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।পানি বন্দি হয়েছে ৩০টি গ্রামের শত শত মানুষ। তবে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের কোথাও কোন হাতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বুধবার (২০ মে) ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বিকেল থেকেই থেমে থেমে দমকা বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধ্যার পর থেকে রাত যত গভীর হয়, বাতাসের তীব্রতাও তত বাড়তে থাকে। গভীর রাতে প্রচন্ড গতিতে আম্পান আঘাত হানে এ উপজেলায়। প্রায় তিন ঘণ্টা চলে আম্পানের তান্ডব।
আম্পানের কারণে বুধবার দুপুরে উপজেলার ৩০টি গ্রামে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। রাতে পাচঁ থেকে ছয় ফুট পানি বৃদ্বি পাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনসহ শহরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করে যার ফলে পানি বন্দি হয়ে পড়ে শত শত মানুষ।পাশাপশি মাছের খামার, ঘের ও পুকুর থেকে মাছ বের হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদফতর।
এছাড়া উপজেলা সদরসহ বিভিন্নস্থানে অর্ধশতাধিক কাচা ঘর-বাড়ি বিদ্ধস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষকের। বর্তমানে মাঠে থাকা রবিশষ্য যেমন মুগডাল, মরিচ, দমকা বাতাসে ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া করোলা, মিষ্টি কুমরা, ঢেরসসহ সবজি ক্ষেতগুলো পানিতে ডুবে আছে।
বুধবার বিকাল থেকে উপজেলার প্রায় ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়ে ছিলো। ঘূর্ণিঝড় আম্পান আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন উপজেলাবাসী। করোনা সংক্রমণের ঝুকি থাকা সত্ত্বেও রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকে এক সঙ্গে থেকেছেন। এর মধ্যে ছিল জোয়ারের পানি লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা। যারা নিজ বাড়িতে ছিলেন তারাও ঝড় আতঙ্কে কাটিয়েছেন নির্ঘুম রাত। এদিকে রাতভর আশ্রয়কেন্দ্রর এসেছেন মানুষ। কেউ কেউ আবার গবাদি পশুও নিয়ে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। সন্ধ্যায় তাদের শুকনো খাবার বিতরন করে রাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খিচুরি বিতরন করা হয়েছে। সকালে আশ্রয় কেন্দ্র অনেকে ছেড়ে গেলেও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো দু’শতাধিক মানুষ বাড়িতে ভিতওে পানি আটকা থাকায় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করতে দেখা গেছে। দুপুরে এদেরকে খিচুঁরি বিতরন করা হয়।
কাউখালী ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের আব্দুস সোবাহান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর রাতেই উপজেলার বিভিন্ন সড়কের উপর থেকে কিছু গাছপালা অপসারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে বোরো ধান, পানবরজ, ভুট্টাক্ষেত, আম ও কলা,সবজি ক্ষেতসহ উঠতি ফসলাদি বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এখনো ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা.খালেদা খাতুন রেখা বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে সহায়তায় প্রদান করা হবে। এছাড়া আপদকালিন সহায়তা নিয়ে মাঠে কাজ করছেন সংস্লিষ্টরা।’
উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিঞা মনু বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই সতর্ক থাকায় ও যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করায় কোথাও কোন হাতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমরা উপজেলার ক্ষতির তালিকা নিরূপণের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’
আরএইচআর/এমআর