তালতলী উপকূলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানকে আমলেই নিচ্ছে না

প্রথম পাতা » বরগুনা » তালতলী উপকূলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানকে আমলেই নিচ্ছে না
মঙ্গলবার ● ১৯ মে ২০২০


তালতলী উপকূলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানকে আমলেই নিচ্ছে না

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড় আম্ফান। তালতলী উপকূলের সাগর ও পায়রা নদী সংলগ্ন অঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আমলেই নিচ্ছে না। তাদের মাঝে বন্যার কোন আতঙ্ক নেই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে মঙ্গলবার (১৯ মে) মাইকিং ও সেচ্ছাসেবকরা কাজ করলেও তারা তা শুনছে না।  তাদের দ্রুত সরিয়ে না নিলে সাইক্লোণ সিডরের পুনাবৃত্তি ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের হাত থেকে রক্ষায় তালতলী উপজেলার উপকূলীয়  বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাহিরের জনসাধারণকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিরাপদ স্থানে আনার চেষ্টা করছি। তাতেও যদি তারা না আসে তবে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন দিয়ে বল প্রয়োগ করে হলেও তাদের নিরাপদ স্থানে আনা হবে। তাদের নিরাপদ স্থানে আনতে প্রতিটি ইউনিয়নে ওয়ার্ড ভিত্তিক সেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। তারা তাদের নিরাপদ স্থানে আনতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, উপকুলের মানুষগুলো সচেতন না। তারা বন্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারপরও একটা মানুষকেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হতে দেব না।
ঘুর্ণিঝড় কর্মসূচী অফিস সুত্রে জানাগেছে, সুপার সাইক্লোণ আম্ফান পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭’শ ২৫ কিলোমিটার দুরে মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী ও তালতলীতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর ও নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাস প্লাবিত হতে পারে। সাগর ও নদী সংলগ্ন মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাসহ জেলেদের নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখতে উপজেলায় ৪৮টি সাইক্লোণ সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৯’শ সেচ্ছাসেবক। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্র ঘুর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি নিয়েছে। উপকুলের মানুষকে সচেতন ও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। তাললতী উপজেলার সাগর ও পায়রা নদী সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ এখনও বসবাস করছে। তাদের উপজেলা প্রশাসন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করলেও তারা প্রশাসনের নির্দেশ মানছে না। তারা ঘুর্ণিঝড় আম্ফানকে আমলেই নিচ্ছেন না। দ্রুত এ লোকজনকে সরিয়ে নিতে  না পারলে সাইক্লোণ সিডরের পুনাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আহবান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে উপকুলীয় এলাকায় আকাশ মেঘাছন্ন, প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম ও হালকা বাতাস বইছে।
মঙ্গলবার খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, তালতলী উপজেলার সাগর ও পায়রা নদী সংলগ্ন পঁচাকোড়ালিয়া, ছোটবগী, মৌপাড়া, গাবতলী, চরপাড়া, তালতলী, খোট্টারচর, তেঁতুলবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা, নলবুনিয়া, ফকিরহাট, নিদ্রাসকিনা ও আমখোলাসহ উপকুলের অধিকাংশ এলাকায় মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরে অবস্থান করছে। এ সকল এলাকার মানুষকে  নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং ও সেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। কিন্ত প্রশাসনের কথা আমলে নিচ্ছে না তারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরে অবস্থান করছে।
গাবতলী আবাসনের আবদুস ছত্তার হাওলাদার বলেন, কি হরমু? কইতে পারি না। দেখইয়্যা লই কি অয়। বইন্যায় বেশী চ্যাতাচ্যাতি হরলে হেই সোমায় যামু।
তালতলী ফকিরহাট বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোঃ ছালাম হাওলাদার বলেন, উপকুলের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরের মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হলেও তারা তা মানছে না। তিনি আরো বলেন,ঘুর্ণিঝড় আম্ফানকে তারা আমলেই নিচ্ছে না। তাদের দ্রুত সরিয়ে না নিলে ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোণ সিডরের পুনাবৃত্তি ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। দ্রুত তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানাই।
সহকারী পরিচালক আমতলী ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী কর্মকর্তা কে এম মাহতাবুল বারী বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭’শ ২৫  কিলোমিটার দুরে মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার মধ্য রাতে উপকুলীয় এলাকা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৯:৪৯ ● ৫৩৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ