আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। আমতলী-তালতলী উপকূলের সাগর ও পায়রা নদী সংলগ্ন অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের আতঙ্ক থাকলেও সাগর ও নদী পাড়ের জেলে পল্লী মানুষের নেই সচেতনতা। উপকুলের মানুষকে রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখতে খোলা রাখা হয়েছে দুই উপজেলার এক’শ ২৮টি সাইক্লোণ সেল্টার। সাগর ও নদীতে মাছ ধরা ট্রলার, নৌকা ও মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে সোমবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
আমতলী ঘুর্ণিঝড় কর্মসূচী অফিস সুত্রে জানাগেছে, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ১০ কিলোমিটার দুরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী ও তালতলীতে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগর ও নদী সংলগ্ন মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাসহ জেলেদের নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখতে দুই উপজেলায় এক’শ ২৮টি সাইক্লোণ সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আমতলীতে ৮০টি এবং তালতলীতে ৪৮টি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে দুই হাজার পাঁচ’শ সেচ্ছাসেবক। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্র ঘুর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি নিয়েছে। উপকুলের মানুষকে সচেতন করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। এদিকে দু’উপজেলার সাগর ও পায়রা নদী সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরে অন্তত লক্ষাধীক মানুষ ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে উপকুলীয় এলাকায় প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দু’উপজেলার সাগর ও পায়রা নদী সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরে বালিয়াতলী, ঘোপখালী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, লোচা, আমতলী পৌরসভার ফেরিঘাট, শ্মশাণঘাট, পানি উন্নয়ন বোর্ড, আঙ্গুলকাটা, গুলিশাখালী, গুলিশাখালীর জেলে পল্লী, পঁচাকোড়ালিয়া, ছোটবগী, মৌপাড়া, গাবতলী, চরপাড়া, তালতলী, খোট্টারচর, তেঁতুলবাড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা, নলবুনিয়া, ফকিরহাট, নিদ্রাসকিনা ও আমখোলাসহ উপকুলের অধিকাংশ এলাকায় সাইক্লোণ সেল্টার নেই। সাইক্লোণ সেল্টার না থাকায় এ সকল অঞ্চলের অন্তত লক্ষাধীক মানুষ মানুষ ঘুর্ণিঝড় আম্ফাণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
তালতলী ফকিরহাট বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোঃ ছালাম হাওলাদার বলেন, এই মুহুর্তে সাগরে ফকির হাটের অন্তত দুই শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাব থেকে রক্ষায় ওই সকল মাছ ধরা ট্রলার ও জেলে নৌকা কিনারে নিরাপদে আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া সাগর পাড়ে জেলেদের নিরাপদে আনতে ইউনিয়ন পরিষদের সেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, উপকুলীয় এলাকায় তেমন সাইক্লোণ সেল্টার না থাকায় সাগর সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ঝুঁকিতে বসবাস করছে।
সহকারী পরিচালক আমতলী ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী কর্মকর্তা কে এম মাহতাবুল বারী বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ১০ কিলোমিটার দুরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আম্ফান মোকাবেলায় ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। মানুষকে নিরাপদে আনতে ইতিমধ্যে সেচ্ছাসেবকরা কাজ শুরু করছে। তিনি আরো বলেন, আগামী বুধবার ঘুর্ণিঝড় আম্ফান উপকুলীয় অঞ্চল অতিক্রম করতে পারে।
আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় দুই উপজেলায় এক’শ ২৮ টি সাইক্লোণ সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনিরা পারভীন বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় মানুষকে সচেতন ও জেলেদের নিরাপদে থাকতে মাইকিং করা হয়েছে। উপজেলার সকল সাইক্লোণ সেল্টার খোলা রাখা রয়েছে। সাইক্লোণ সেল্টারে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মানুষ যাতে থাকতে পাড়ে সেই উপযোগী করা হয়েছে।
এমএইচকে/এমআর