আমতলীতে পুজার আসনে ইটের খোয়া নিক্ষেপ!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে পুজার আসনে ইটের খোয়া নিক্ষেপ!
রবিবার ● ১৭ মে ২০২০


আমতলীতে পুজার আসনে ইটের খোয়া নিক্ষেপ!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার ভাগ্নে নাভিল প্রতিবেশী ধীরেন চন্দ্র শীলের শনি নারায়ণ পুজা বন্ধে পুজার আসনে ইটের খোয়া নিক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় ধীরেন চন্দ্র শীল ও তার ভাগ্নে মিঠুন চন্দ্র শীলসহ চারজনকে কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা মারধর করেছে। আহত ধীরেন চন্দ্র শীল ও মিঠুনকে স্বজনরা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে শনিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আমতলী উপজেলা পরিষদের সামনে। এ ঘটনায় রবিবার (১৭ মে) সুনীতি রানী বাদী হয়ে সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌসসহ চার জনের নামে থানায় মামলা করেছে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলা পরিষদের সামনে ধীরেন্দ্র চন্দ্র শীল শনিবার রাতে শনি নারায়ন পুজা করছিল। সন্ধ্যা ৭ টায় পুজা শুরু হয়। দুই ঘন্টাব্যাপী এ চলে এ পুজা। ওই পুজায় ১০-১২ শুভাকাঙ্খি অংশ নেয়। ভয়ভীতি দেখিয়ে পুজা বন্ধ করার জন্য পুজার আসন লক্ষ করে কেউ ইটের খোয়া ছুড়ছিল। পুজা প্রায় শেষের দিকে এ সময় একটি খোয়া এসে পুজার আসনে বসা লোকজনের শরীরে লাগে। তখন ধীরেন চন্দ্র শীলের ভাগ্নে মিঠুন চন্দ্র শীল খুঁজতে নামে কে ইটের খোয়া মারছে। মিঠুন খুঁজতে গিয়ে দেখে প্রতিবেশী সাবেক কাউন্সিলর মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস তার ভাগ্নে নাভিল তার ব্লিডিং’র দোতলায় বসে ইটের খোয়া ছুড়ছিল। এ দৃশ্য দেখে মিঠুর ওইখানে গিয়ে এর প্রতিবাদ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা মিঠুনকে মারধর শুরু করে। খবর পেয়ে ধীরেন চন্দ্র শীল পুজার আসন ছেড়ে ভাগ্নেকে রক্ষায় এগিয়ে আসে। এ সময় কাউন্সিলর ফেরদৌস, ভাগ্নে নাভিল ও তার ছোট ভাই মোঃ হাসান মৃধা প্রতিবেশী ধীরেন চন্দ্র শীলকে মারধর করে। তাকে রক্ষায় ধীরেনের স্ত্রী সুনীতি রানী ও মা পুস্পরানী এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করেছে তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কাউন্সিলর ও তার লোজন পালিয়ে যায়। পরে স্বজনরা আহত ধীরেন চন্দ্র শীল ও মিঠুনকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় রবিবার ধীরেন চন্দ্র শীলের স্ত্রী সুনীতি রানী বাদী হয়ে সাবেক কাউন্সিলর ফেরদৌসকে প্রধান আসামী করে হাসান মৃধাসহ চার জনের নামে থানায় মামলা করেছে।
মিঠুন চন্দ্র শীল বলেন, সাবেক কাউন্সিলর ফেরদৌস ও তার ভাগ্নে নাভিল তাদের ব্লিডিংএর দোতলায় বসে পুজার আসনে ইটের খোয়া ছুড়ছিল। আমি দেখে এর প্রতিবাদ করলে আমাকে তারা মামা-ভাগ্নে মিলে ওইখানে মারধর করে। ব্লিডিংএর নিচে নামিয়ে আবারো আমাকে আবারো মারধর  শুরু করলে আমার মামা ধীরেন চন্দ্র শীল, মামি সুনীতি রানী ও নানি পুস্পরানী এগিয়ে আসলে তাদেরকে মারধর করেছে।
ধীরেন চন্দ্র শীল বলেন, শনিবার রাতে শনি নারায়ণ পুজা করছিলাম। ভয়ভীতি দেখিয়ে পুজা বন্ধ করার জন্য কেউ পুজার আসনে ইটের খোয়া ছুড়ছিল। পুজা শেষের দিকে আমার ভাগ্নে মিঠুন বাহিরে গিয়ে দেখে সাবেক কাউন্সিলর মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার ভাগ্নে নাভিল পুজার আসন লক্ষ করে ইটের খোয়া ছুড়ছিল। আমার ভাগ্নে এর প্রতিবাদ করলেই তাকে মারধর শুরু করে। ভাগ্নেকে রক্ষায় আমি এগিয়ে গেলে আমাকে কাউন্সিলর ও তার ছোট ভাই হাসান মৃধা ও ভাগ্নে নাভিল মারধর করেছে। পরে আমাকে রক্ষায় আমার স্ত্রী ও মা এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধর করেছে। তিনি আরো বলেন,কাউন্সিলর বিভিন্ন সময় আমাদের পুজা বন্ধ করার জন্য পায়তারা চালিয়ে আসছে।আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এ ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস’র ছোট ভাই হাসান মৃধা বলেন, গাছ থেকে আম পড়েছে আর ওরা মনে করেছে ঢিল মেরেছে। তবে পুজার আসনে কেউ ঢিল ছুড়েনি। এনিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হতে তিনি আরো বলেন, দু’পক্ষকে নিভৃত করার সময় ধীরেন চন্দ্র শীলের নাখে নখের আচর লেগেছে। চিকিৎসক বলেছে এ ঠিক হয়ে যাবে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আমতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ কর্মকার বলেন, পরিকল্পিতভাবে পুজা বিনষ্ট করার জন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার সামিল। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবী করছি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, ধীরেন চন্দ্র শীলের নাখে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৪:১০ ● ২৮১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ