আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আদা, রসুন, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, লেবু ও সরিষার তেল মিশ্রিত গরম পানির ভাপেই আমতলীর একই পরিবারের তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। একেই বলে রাখে আল্লাহ মারে কে? করোনা জয়ী পরিবারের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। শনিবার (১৬ মে) ওই পরিবারের তিনজনকেই আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়েছেন। অপর দিকে ওই পরিবারের তিন করোনা আক্রান্তের সাথে থেকেও বড় ছেলে মাশরাফি রহমান করোনা মুক্ত। এ ঘটনার বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন আমতলী হাসপাতালের করোনা চিকিৎসক শংকর প্রসাদ অধিকারী।
জানাগেছে, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালের আমতলী এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মিজানুর রহমান মিজান গত ৬ এপ্রিল থেকে জ্বর ও হালকা কাশি নিয়ে পৌরসভার আমতলী বন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন শহীদুল ইসলাম তালুকদারের ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিলেন। তার শরীরের অবস্থা বেগতিক দেখে পরিবারের সদস্যরা গত ১৯ এপ্রিল আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহাদাত হোসেনে ব্যাক্তিগত চেম্বারে নিয়ে আসেন। পরে তিনি তাকে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। ২০ এপ্রিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার নমুনা সংগ্রহ করেন এবং ঢাকা রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেয়। ২২ এপ্রিল তার নমুনা প্রতিবেদন আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে তিনি প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই ঘটনার পর থেকেই তিনি বাসার আইসোলেশনে আছেন। ২৩ এপ্রিল তার পরিবারের স্ত্রী, দুই শিশু পুত্রের নমনা সংগ্রহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই নমুনা তারা ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। ২৫ এপ্রিল রাতে তাদের নমুনা প্রতিবেদন আমতলী উপজেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আসে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে ম্যানেজারের স্ত্রী ফারহানা রহমান ও সাত বছরের শিশুপুত্র মুশফিকুর রহমান ফারাজ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং বড় ছেলে মাশরাফি রহমান করোনা নেগেটিভ। পরিবারের তিনজন করোনা আক্রান্তের খবরে ভেঙ্গে পরে তারা। শিশুপুত্র ফারাজকে বুঝতে দেয়নি করোনার হিংসাত্মক থাবার কথা। কিন্তু সাহস হারাইনি তারা। বাঁচার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধে নামের মিজান ও তার স্ত্রী ফারহানা। খুজতে থাকেন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসকে পরাস্ত করা কৌশল। কিন্তু কোন কৌশলই তাদের সুগম নয়। পরে চিকিৎসকরা ঘরোয়া টোটকা চিকিৎসার পরামর্শ দেয়। তাদের পরামর্শ অনুসারে আদা, রসুন, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, লেবু ও সরিষার তেল মিশ্রিত গরম পানির ভাপ দেয়া শুরু করেন। শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার ভাপ নিতে থাকেন তারা। নিজের উদ্যোগে ডি-সেফা, আমলাবেরী, এজিমেক্স ও টামেনটারবো ঔষধ খেতেন। তবে টামেনটারেবো ও এজিমেক্স বেশী দিন খাননি বলে জানান করোনা জয়ী মোঃ মিজানুর রহমান। ঘরোয়া টোটকা চিকিৎসা চলে ১৪ দিন। ১৪ দিন শেষে আমতলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দফায় তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠায়। দ্বিতীয় দফায় তাদের নমুনা প্রতিবেদন নেগেটিভ আসে। স্বস্থি ফিরে আসে পরিবারের মাঝে। দ্বিতীয় দফায় করোনা নেগেটিভ আসলেও তারা হাল ছাড়েনি। এভাবেই চালিয়ে যান ঘরোয়া টোটকা চিকিৎসা। শুক্রবার বিকেলে তাদের তৃতীয় দফায় নমুনা প্রতিবেদন আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে তারা করোনা ভাইরাস নেগেটিভ। এদিকে বড় ছেলে মাশরাফি রহমান পরিবারের সাথে থেকেও করোনা তাকে আঘাত করতে পারেনি। তিনি পরিবারের লোকজনকে সার্বিক সহযোগীতা ও সাহস যুগিয়েছেন।
করোনা জয়ী ফারহানা আক্তার বলেন, মনবল শক্ত রেখে পরিস্কার পরিছন্ন থেকেই করোনাকে জয় করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, গরম মসলা মিশ্রিত গরম পানির ভাব নিয়ে ও গরম পানি খেয়েই আমরা পরিবারের সবাই করোনা জয় করেছি।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ঔষধ কোম্পানীর এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মিজানুর রহমান মিজান মুঠোফোনে বলেন, আল্লাহর ইচ্ছা ও মানুষের ভালোবাসায় করোনা জয় করেছি। ঘরোয়া টোটকা চিকিসায়ই আল্লাহ সুস্থ্য করে তুলেছেন। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার আদা, রসুন, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, লেবু ও সরিষার তেল মিশ্রিত গরম পানির ভাপ নিতাম। শুরুতে সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গিয়েছে। তিনি আরো বলেন, নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা রোগীদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করবো।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, করোনা জয়ী একই পরিবারের তিন জনই করোনা মুক্ত। কিন্তু তাদের আরো ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
এমএইচকে/এমআর