করোনাকালের সরকারী খাদ্য সহায়তা- কলাপাড়ায় তালিকায় অনিয়ম বঞ্চিত শত শত দরিদ্র পরিবার
প্রথম পাতা »
পটুয়াখালী »
করোনাকালের সরকারী খাদ্য সহায়তা- কলাপাড়ায় তালিকায় অনিয়ম বঞ্চিত শত শত দরিদ্র পরিবার
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড জুটেছে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বান্ধব কিংবা ভক্ত-অনুসারিদের ভাগ্যে। সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এভাবে ২০ হাজার ১৫৩ কার্ডধারীর চাল ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। করোনাকালে এসব চালের এক পঞ্চমাংশ বিত্তবানরা হাতিয়ে নিয়েছে।
একই দশা ১৮ হাজার ৩০৫ কার্ডধারী কথিত জেলেদের বিতরণ করা চালে। জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকা জেলেদের ৮০ কেজি করে চাল বিতরণ করার নির্দেশনা রয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দুই দফায় এচাল বিতরণ শেষ পর্যায়ে। প্রথম দফায় নয় হাজার ১৪৩ জনকে এবং দ্বিতীয় দফায় ১০ হাজার ২৪৩ জনকে ৮০ কেজি করে চাল বিতরন করা হয়। এ তালিকায় রয়েছে কমপক্ষে চার হাজার নাম ভুয়া। এরা জেলে নয়। রয়েছে ভ্যান-অটো কিংবা ভাড়াটে মোটর সাইকেল চালক। প্রকৃত জেলে যারা নদী কিংবা সাগরে মাছ ধরছে তাদের ভাগ্যে শতভাগ চাল জোটেনি। ভুয়া কার্ডধারীরা হাতিয়ে নিয়েছে শত শত টন চাল। একই দশা ১০ টাকা কেজি দরের ২০ কেজি করে চাল কেনার রেশনকার্ডধারীর তালিকার। সরকারের পরিপত্র উপেক্ষা করে যাদের ঘরে বছরের খোরাকি চাল রয়েছে তাদের অসংখ্য নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আর এখন চলছে বিশেষ প্রণোদনার নগদ অর্থ পাওয়া মানুষের নামের তালিকা তৈরির কাজ। নিয়ম কানুনের বালাই নেই এসব তালিকা তৈরিতে। আর উপজেলা প্রশাসন এনিয়ে থাকছে নীরব। ফলে সরকারের শত শত টন খাদ্য সহায়তা প্রকৃত দরিদ্র, নি¤œবিত্ত মানুষের কাছে পৌছে না।
চাকামইয়া ইউনিয়নের কাঠালপাড়া গ্রামের ইয়াছিন মুন্সীর অভিযোগ, রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এখন বেকার। পাঁচজনের সংসারে খাবার যোগান দিতে পারছেন না। করোনার কারনে বেকার এ মানুষটি খাদ্য সহায়তার জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। মিঠাগঞ্জের মেলাপাড়া গ্রামের কয়েকজন অতিদরিদ্র মানুষের অভিযোগ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড পর্যন্ত পেয়েছেন গ্রামটির সবচেয়ে বিত্তবান পরিবারের সদস্যরা। ৪০-৫০ বিঘা জমির মালিক হয়ে তার নাম থাকলেও বাদ পড়েছে বিত্তহীন মানুষ। টিয়াখালীর নাচনাপাড়া গ্রামের মানুষের এন্তার অভিযোগ, মেম্বারকে তারা ভোট দেয়নি, এই অজুহাতে তাঁদের কোন ধরনের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়না। তারা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ায় ৮-১০ কেজি চালসহ একটি করে প্যাকেট দেয়া হয়েছে। তা এখন আর নেই।
কলাপাড়ার ১২টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভায় রয়েছে ত্রাণ মনিটরিং কমিটি। একমিটির সদস্যরা আরও আগেই জরুরি সভা করে সকল ধরনের খাদ্য সহায়তাভোগীদের তালিকা ইউনিয়ন পরিষদে টানিয়ে দেয়ার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু তা কার্যকর করেনি উপজেলা প্রশাসন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। এমনকি কলাপাড়া পৌরসভাসহ বিভিন্ন হাটবাজারের যেসব দোকানি কর্মহীন হয়েছেন তাঁদের সঠিক কোন তালিকা পর্যন্ত নেই কারও কাছে। ফলে সরকার পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ দিলেও শুধুমাত্র অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তালিকা প্রণয়ন করায় একই ব্যক্তি বার বার খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত দরিদ্র মানুষ। আর সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ ভেস্তে যাচ্ছে অনিয়ম আর দুর্নীতির কারনে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, তিনি এসংক্রান্ত যেসব অভিযোগ পেয়েছেন তা তদন্ত স্বাপেক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। আর সুবিধাবঞ্চিতরা তার কাছে অভিযোগ করলে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
এমইউএম/এমআর
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৬:৪২ ●
৭৩৮ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)