ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জ্বালানি তেল বিপণনের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কাছ থেকে বকেয়া ভ্যাটের টাকা আদায় করতে পারছে না। বরং দীর্ঘ ৫ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে বকেয়া ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বাবদ ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। নানামুখী চেষ্টা-তদবিরেও আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ওই অর্থ আদায়ে কাক্সিক্ষত সফলতা পায়নি। পাশাপাশি বিপিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বকেয়া অর্থ আদায়ে বিশেষ জোরাজুরিও করতে পারছে না এনবিআর। অথচ চলতি অর্থবছর এনবিআরকে বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলেও প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি। ৪০ শতাংশের উপরে আদায় বাড়নোর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪ শতাংশ। এখন লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যেতে পেট্রোবাংলা, বিপিসিসহ বড় আকারের প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া পড়ে থাকা রাজস্ব উদ্ধারকেই অন্যতম ভরসা বলে মনে করছে এনবিআর। সেজন্য বিপিসির কাছ থেকে বকেয়া ভ্যাটের অর্থ পরিশোধের জন্য এনবিআর সম্প্রতি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিপিসির আওতাধীন জ্বালানি তেল সরবরাহকারী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বিপিসির নামে ঋণপত্র (এলসি) খুলে পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন আমদানি ও সরবরাহ করে। ওসব কোম্পানি সরবরাহকালে গ্রাহকের কাছ থেকে পুরো ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারের রাজস্ব কোষাগারে জমা হয়নি। চট্টগ্রামের ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের বিশেষ সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড এর ডাটা সংগ্রহ করে ওই বিশাল অনিয়ম উদ্ঘাটন করতে সমর্থ হয়। এনবিআরের দাবি অনুযায়ী বিগত ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত পদ্মা অয়েল কোম্পানি ৮০৫ কোটি টাকা, যমুনা অয়েল কোম্পানির কাছে ৮০৪ কোটি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি ৯৮০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি ১৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি। অর্থাৎ মোট ২ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি।
সূত্র জানায়, জ্বালানি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তাদের কমিশন কেটে রেখে অবশিষ্ট অর্থ বিপিসিকে পরিশোধ করেছে। কিন্তু বিপিসি তা এনবিআরে জমা দেয়নি। অবশ্য নানা আলোচনার পর বিগত অর্থবছরে বকেয়া অর্থের মধ্যে ২১৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাদবাকি ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা এখনো অনাদায়ী। বিপিসি আমদানি মূল্যের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৪ শতাংশ এটিভি (অগ্রিম ভ্যাট) পরিশোধ করেছে। কিন্তু সরবরাহকালে বর্ধিত মূল্যের উপর প্রযোজ্য ভ্যাট দেয়নি।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রতি লিটার ডিজেলের আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট ছিল ৯ টাকা ৬৮ পয়সা। তার মধ্যে এনবিআরকে ৫ টাকা ৪৪ পয়সা পরিশোধ করা হলেও প্রতি লিটারে ৪ টাকা ২৪ পয়সা দেয়া হয়নি। তাছাড়া কেরোসিন, অকটেন, পেট্রোল ও ফার্নেস অয়েলের ভ্যাট প্রতি লিটারে যথাক্রমে ৯ টাকা ৭৯ পয়সা, ১৪ টাকা ২ পয়সা, ১৩ টাকা ৬০ পয়সা ও ৮ টাকা ৭৭ পয়সা। ওসব ক্ষেত্রেও এনবিআরে সঠিক পরিমাণে রাজস্ব জমা দেয়া হয়নি। সব মিলিয়ে বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
এদিকে বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে বকেয়া থাকা অর্থ বিপিসির নিজস্ব তহবিল কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। কিন্তু অর্থ বিভাগ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কার্যকর উদ্যোগের অভাবে ওই অর্থ এখনো আটকে আছে। তার আগে বুক এডজাস্টমেন্টের (খাতা কলমে আদায় হিসেবে দেখানো) মাধ্যমে ওই অর্থ আদায় দেখানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও তাও আইনি ব্যাখ্যায় আটকে আছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, বকেয়া টাকার মধ্যে বিপিসি অল্প অল্প করে কিছু টাকা দিয়েছে। তবে দ্রুত ওই অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে খুব শিগগিরই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। যাতে ‘বিশেষ’ ব্যবস্থায় ওই অর্থ পরিশোধ করে সে অনুরোধ জানানো হবে। কারণ এনবিআরের সামনে বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এফএন/এমআর