চরফ্যাশন সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী মনির হোসেন লোকমানের (৪৪) বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাসের পর মাস ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও, ছবি রেখে বিয়ে না করে প্রতারণার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেও কোন কুল-কিনারা পাচ্ছেনা ভুক্তভোগী সালমা বেগম। অথচ সেই বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাচন অফিসের একই পদে বহাল তবিয়তে আছেন অভিযুক্ত সেই মনির হোসেন লোকমান। লোকমানের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত ভোলায় এ বিষয় একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। ( মামলা নং ১১৫/২০২০)
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ এ সংবাদ সম্মেলনে সালমা বেগম জানান, তার বাড়ি চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কাশেমগঞ্জ এলাকায়। তিনি ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য চরফ্যাশন নির্বাচন অফিসে যান। এসময় মনির হোসেন ওরফে লোকমান ওই অফিসের ‘অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ভোটার আইডি কার্ড দ্রুত সংশোধন করে দেবেন বলে সালমা বেগমের কাছ থেকে কাগজপত্র নেয়।
পরিচয়ের পর এক পর্যায়ে লোকমান সালমা বেগমকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি না হলে লোকমান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সালমা বেগমকে প্রেমে রাজি করায়। এর কিছুদিন পর লোকমান সালমা বেগমকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। সালমা বেগম তখন রাজি হন।
গত ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি লোকমান বিবাহের কথা বলে সালমা বেগমকে ঢাকার শ্যামলীতে তার এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে কাজী ডেকে এনে তাদের দুজনের বিয়ে পড়ান। ওই সময় সালমা বেগম কাবিননামার কথা বললে লোকমান আইডি কার্ড সংশোধন করা হলে তারপর কাবিন করবেন বলে সালমাকে জানায়।
বিবাহের পর থেকে তাদের দুজনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর হিসেবে সংসার করতে থাকে। এমনকি লোকমান সালমা বেগমের বাড়ীতেও বেশ কয়কবার বেড়াতে যায়। স্ত্রী হিসেবে সালমা বেগমকে নিয়ে সে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতো। অল্প কয়েক দিন তাদের সম্পর্ক ভালোই চলছিলো। এসময় লোকমান সালমা বেগমের কিছু অশ্লীল ভিডিও ও ছবি তুলে রাখে।
কিছুদিন পর সালমা বেগম লোকমানের কাছে বিয়ের কাবিননামা চাইলে লোকমান ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। লোকমান উত্তেজিত হয়ে সালমা বেগমকে মারধর করে এবং তার সঙ্গে কোনো বিবাহ হয় নাই বলে জানায়। বিভিন্ন সময় সালমা বেগমের তোলা অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে বলে সালমা বেগমকে হুমকিও দেয় লোকমান।
এ অবস্থায় লোকমান চরফ্যাশন নির্বাচন অফিস থেকে বদলী হয়ে পটুয়াখালী যোগদান করেন। সর্বশেষ বর্তমানে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাচন অফিসে কর্মরত আছে। স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে লোকমানের সাথে যোগাযোগ করলে সালমা বেগমকে প্রাণনাশের হুমকি ও ইন্টারনেটে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ছেড়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে সে সালমা বেগমকে চিনে না বলে জানিয়ে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী সালমা বেগম বাদী হয়ে ভোলার জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে চরফ্যাশন পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জালাল মাষ্টারের পুত্র অভিযুক্ত মনির হোসেন ওরফে লোকমান গণমাধ্যমকে বলেন, তার সঙ্গে আমার কিছুদিন আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর বাইরে আর কিছু না। তাকে আমি বিবাহ করিনি, সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। অশ্লীল ভিডিও ও ছবির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তাও অস্বীকার করেন লোকমান।
এ নিয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার মো. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন ‘বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এছাড়াও মোবাইলে ভোলার পুলিশ সুপার আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে আদালতে শুনেছি মামলা হয়েছে।’ যদিও এখনও দৃশ্যমান কোন বিচার না হলেও একইস্থানে কর্মরত আছেন ওই অভিযুক্ত লোকমান। আর কি কারনে লোকমান বহাল তবিয়তে রয়েছেন তা এড়িয়ে গেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তিক চন্দ্র বিশ্বাস জানান, তদন্ত শেষ নাকি শুরুই হয়নি কোন বিষয়ই আমি মন্তব্য করবোনা। এটা গোপন বিষয়।
সালমা বেগম বলেন ‘মামলার তদন্তে গাফলতি করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি প্রকাশ্যে আমার বাড়ির প্রতিবেশীদের সাক্ষ্য নিলেও রিপোর্টে তা উল্লেখ করেন নি। ছবি, অডিও রেকর্ড তাকে দিলেও কোন ধরণের পরীক্ষা ছাড়াই সেগুলোকে এডিটিং বলে ধারনা করে রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন। তিনি মোটা অংকের মাধ্যমে আমার প্রমাণাদি ভুয়া বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। লোকমানের চাচা হারুন মাষ্টার আলামত নষ্ট ও কালক্ষেপণ করায় আামার বিচারে বেগ পেতে হচ্ছে। লোকমানের চাচা হারুন মাষ্টার আপোষ করার প্রস্তাব দিলে রাজি না হলে সাংবাদিকদের কাছে তিনি আমার মা, বোন, আমাকে দেহ ব্যবসায়ী বলে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেব আমি।
এমএএইচ/এনবি