আক্রান্ত স্বামীর বিছানায় ১৭ দিন থেকেও স্ত্রী করোনা মুক্ত

প্রথম পাতা » বরগুনা » আক্রান্ত স্বামীর বিছানায় ১৭ দিন থেকেও স্ত্রী করোনা মুক্ত
রবিবার ● ৩ মে ২০২০


ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় দিচ্ছেন চিকিৎসক

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত স্বামীর সাথে একই বিছানায় ১৭ দিন থেকেও স্ত্রী  করোনাভাইরাস মুক্ত ছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। ঘটনাটি ঘটেছে আমতলী উজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে। এ ঘটনায় হতবাগ আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও সেবিকারাও।
জানা গেছে, উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক মোঃ হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া গত ১৬ এপ্রিল ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। গত ১৮ এপ্রিল (শনিবার) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা রোগতত্ত্ব  রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পাঠিয়ে দেয়। ২১ এপ্রিল তার নমুনা প্রতিবেদন আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে তিনি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই সময় থেকেই তিনি আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্বামী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবরে ভেঙ্গে পরেন স্ত্রী রোজিনা বেগম। ধরেই নিয়েছেন স্বামী আর বাঁচবেন না। স্বামী না বাঁচলে তার বেঁচে থেকে লাভ কি? বেঁচে থাকলে দু’জনেই থাকবো- এমনটা জানালো স্ত্রী রোজিনা বেগম।  প্রতিজ্ঞা করেন তিনি স্বামীকে সুস্থ করে দুজনেই বাড়ী ফিরবেন। নিজের জীবনের দিকে না তাকিয়ে আমতলী হাসপাতালের আইসোলেশন কক্ষেই স্বামীর পাশে এই বিছানা থেকে তার সেবা করতে থাকেন। চিকিৎসকদের বাঁধা থাকলেও তিনি তা মানেন নি। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্ত্রী রোজিনার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠায়। কিন্তু তার প্রতিবেদনে তিনি করোনা ভাইরাস নেগেটিভ আসে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফায় স্বামী ও তার নমুনা প্রতিবেদন নেগেটিভ আসে। শনিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক শংসর প্রসাদ অধিকারী তাকে সুস্থতার ছাড়পত্র দেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে ছেড়ে দেন। এই প্রথম আমতলী উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফিরলেন। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ী ফেরায় এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এদিকে গত ১৭ দিন স্বামীর সাথে একই বিছানায় থেকে স্ত্রী রোজিনা বেগম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তিনি করোনা মুক্ত হওয়ায় হতবাগ চিকিৎসক ও সেবিকারা।
স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, ‘আল্লার উপর ভরসা রাইখ্যা মুই মোর ব্যাডার যতন হরছি। আল্লায় মোর ব্যাডারে ভালো হরছে। আর মোর কিছু অয়নাই। শুরু হয়তেই মুই ব্যাডারে ছাইর‌্যা যাইনাই। এক বিছানায় ঘুমাইছি সতারোডা দিন।’
করোনা ভাইরাসে জয়ী হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, আল্লায় বাঁচাইছে। এখন আমি সম্পুর্ন সুস্থ আছি। ডাক্তার ও নার্সদের সেবার পাশাপাশি আমার স্ত্রীর আমার পাশে থেকে সার্বক্ষণিক সেবা করেছে। একই সাথে খেয়েছি, একই সাথে একই বিছানায় ঘুমিয়েছে। একটি মুহূর্তের জন্যও ও আমাকে ছেড়ে যায়নি। গত ১৭টি দিন আমার পাশে থেকেই আমাকে সেবা করেছে। তিনি আরো বলেন, করোনাকে জয় করে বাড়ী ফিরেছি। গবির মানুষ লকডাউন মুক্ত হলেই কাজে ফিরে যাব।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত  হাবিবুর রহমানের স্ত্রী-ও তার সাথে আইসোলেশনে ছিল। স্বামী-স্ত্রী একই বিছানায় থেকেও স্ত্রী করোনা মুক্ত। এটা আশ্বার্য্যরে বিষয়। তিনি আরো বলেন, হয়তোবা তার স্ত্রীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী, তাই এমনটা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৪:৪৭ ● ৪৬০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ