পটুয়াখালী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
কাজ শুরুই হয়নি। অথচ সংশ্লিষ্ট তদারক দপ্তর বলছেন চার তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ওই পরিমান কাজের খাদ্যশষ্যের (চাল) পিও দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প সভাপতি বলছেন, কাজ পরে করা হবে। খাদ্যশষ্যের ডিও নিয়ে খাদ্য গুদামে মজুত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত (৩০ এপ্রিল) ছাড়িয়ে নেওয়া হয়নি। খাদ্য গুদামের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, চাল ছাড়করণ করা হয়েছে। এ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। আর এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের কাটাখালী খালের অগ্রভাগ পুনঃখনন প্রকল্পের বেলায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক ১ম পর্যায় নন-সোলার খাতের ৪৫ মেট্রিকটন খাদ্যশষ্য (চাল) দিয়ে ডিয়ারা কচুয়া কাটাখালী খালের অগ্রভাগ পুনঃখনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। স্থানীয় সাংসদ আ.স.ম ফিরোজ’র লিখিত সুপারিশে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি করা হয় মো. জাফরকে। তিনি চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।
তিনি প্রায় দেড় বছর আগে একটি চুরির মামলায় দীর্দিন করাভোগের পর জামিনে বের হন। জাফর সরকারদলীয় যুবলীগের নেতা হওয়ার হওয়ার সুবাধে ও স্থানীয় সাংসদ আ.স.ম ফিরোজ এমপির ঘনিষ্ট লোক হওয়ায় বাদী গরু চুরির মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মানুযায়ী কাজ শেষ করে সাত দিনের মধ্যে উত্তোলিত খাদ্যশষ্যের মাষ্টাররোল ও খালি বস্তার হিসেবসহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করে প্রাপ্তি রসিদ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু কাগজে-কলমে সব ঠিকঠাক দেখানো হয়েছে এবং ওই কাজ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পরিদর্শ করে সন্তোষজনক হওয়ায় সর্বশেষ ১০ মার্চ তৃতীয় কিস্তিতে ১১ দশমিক ২৫ মেট্রিকটন চালের ডিও দেওয়া হয়। এ নিয়ে তিন কিস্তিতে মোট ৩৩ দশমিক ৭৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা ইতিমধ্যে খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাটাখালী খালের অগ্রভাগ পুনঃখননের কোনো কাজ শুরুই হয়নি। খালটির অগ্রভাগে চর জেগেছে। ভাটার সময় ওই খালের আগ্রভাগ দিয়ে ট্রলার কিংবা ইঞ্জিন চালিত নৌকা ঢুকতে পারে না। আর এ কারণেই খাল খননের প্রকল্প নেওয়া হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়ন সভাপতি মো. জাফর বলেন, ‘খালের খনন কাজ বিভিন্ন সমস্যার কারণে শুরু করতে পারেননি। আর এ কারণে বরাদ্দকৃত চালের ডিও নিলেও উত্তোলণ করেননি। যা কালাইয়া সরকারি খাদ্যগুদামে মজুত আছে। খাল খনন করে উত্তোলণ করা হবে।’ কালাইয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, ‘ডিও পাওয়ার পর যথাসময়ে চাল ছাড়করণ করা হয়েছে। খাদ্য গুদামে চাল মজুত নেই।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শ্রমিকদের ওই চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আর সম্প্রতি (১৪ এপ্রিল রাতে) এক কালোবাজারিকে বাউফলের বগা বন্দর এলাকা থেকে সরকারি বিপুল পরিমান চালসহ পুলিশ আটক করে। ওই ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। ওই কালোবাজির কারাগারে আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, জব্দ করা ওই চালের মধ্যে খাটাখালী খাল খনন প্রকল্পের চালও আছে।
পিআইও রাজিব বিশ্বাস বলেন, ‘যে পরিমান কাজ শেষ হয়েছে ওই পরিমান চালের ডিও দেওয়া হয়েছে।’ কাজতো শুরু-ই হয়নি, তাহলে কাজ শেষ হল কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।