কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
এ বছর, ২০১৯ সালের শেষের দিকে উৎপাদনে যাচ্ছে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার মধ্য দিয়ে সাগরপারের কলাপাড়ায় প্রথম বিদ্যুত উৎপাদন হবে।
কলাপাড়ার ধানখালীতে আন্দারমানিক ও রাবনাবাদ নদীর মিলনস্থলের তীরে মনোরম পরিবেশে এ বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ চলছে এখন দ্রুতালয়ে। ২৪ ঘন্টার কর্মযজ্ঞে গোটা এলাকা রয়েছে মুখরিত। পায়রা তৃতীয় সমুদ্র বন্দরের নামানুসারে এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি ১০০০ একর জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে। পরিবেশ প্রতিবেশ সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে দুই প্লান্ট মিলে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এ ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হবে। প্রথমটির উৎপাদন শুরুর ছয় মাস পরে এ প্রকল্পের ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার অপর বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এর যৌথ মালিকানায় এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৩ ভাগ। খবর সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সুত্রের।
সুত্র মতে, বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) ৫০ভাগ করে মালিকানা রয়েছে এ কেন্দ্রে। যৌথভাবে বিসিপিসিএল এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক প্রকল্পের অর্থায়ন করছে। বিদ্যুতকেন্দ্রটি সম্পন্ন করতে সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ২.৪৮ বিলিয়ন ডলার। যা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এ বিদ্যুত কেন্দ্রের ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং, প্রশাসনিক ভবন, ডরমেটরি, পুলিশ ফাড়ি, হেলিপ্যাডসহ স্থাপনার কাজ প্রায় শেষের পথে। টারবাইন সেটআপ, রটর ট্রান্সফরমা, জেনারেটরসহ আনুসঙ্গীক যন্ত্রপাতি প্রকল্প এলাকায় এসে গেছে। এসব এখন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ২২০ ফুট উচ্চতার চিমনি স্থাপনের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুতকেন্দ্রটি ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুতকেন্দ্র। সেখান থেকে বিদ্যুত উৎপাদন হয় ৯৫০ মেগাওয়াট।
বর্তমানে ৩৮৫ মিটার দীঘ, ২৪ মিটার প্রস্থ মূল জেটির নির্মাাণ কাজ শেষ পর্যায়। জেটিতে সরাসরি মাদার ভেসেল জেটিতে ভেড়ার জন্য গোটা চ্যানেলের ২০ কিমি দীর্ঘ চ্যানেল নাব্যতা সাড় সাত মিটার ড্রাফট করার খনন কাজ চলছে। খননের কাজটি করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এছাড়া পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বৃহৎ পরিসরে খনন কাজ সম্পন্ন করলে মাদার এবং লাইটার ভেসেল ভিড়তে এবং কয়লাসহ পণ্য খালাসে কোন সমস্যা হবেনা। বিসিপিসিএলএর সহকারী প্রকৌশলী মোঃ পিঞ্জুর রহমান জানান, এ জেটিতে সুপ্রাম্যাক্স, প্যানাম্যাক্স সাইজের জাহাজ খালাস করার সক্ষমতা রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কয়লাসহ পণ্য খালাশ করার সুবিধা থাকছে। প্রকল্পের কাজ দ্রুতগামী করতে দেশ-বিদেশের প্রায় নয় হাজার কর্মী কাজ করছে। যার মধ্যে চীনা কর্মী আছে প্রায় দুই হাজার।
পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুত উৎপাদনে কেন্দ্রটিতে কয়লার বার্ষিক চাহিদা দাঁড়াবে ৪২ লাখ থেকে ৪৬ লাখ টন। সার্বক্ষণিক মজুদ থাকবে ৪০ দিনের কয়লা। প্রাথমিকভাবে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে বছরের মাঝামাঝি সময় কয়লা আমদানী শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চারটি গ্র্যাব শিপ আনলোডার জাহাজ পায়রা বন্দরে এসে গেছে। আনলোডের প্রস্তুতি চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পায়রায় কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)’র তত্ত্বাবধানে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান জিএস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন করপোরেশন এ কাজ সম্পন্ন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বাণিজ্যিক ভাবে এ বিদ্যুতকেন্দ্রের উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছে এবছরের শেষের দিকে প্রথম প্লান্টটি উৎপাদনে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যেই পায়রা তাপ বিদ্যুতকেন্দ্রের অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য পুনর্বাসন ও আবাসন প্রকল্প এরই মধ্যে সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৬ একর জমির ওপর নির্মিত পুনর্বাসন পল্লী ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ২৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। সেখানে এখন ক্ষতিগ্রস্ত ১৩৫ পরিবার বসবাস করছে।
এমইউএম/এমআর