আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলীতে সাড়ে ১৬ শতাংশ জমির জন্য বিধবা বড় ভাবি আমেনা বেগমের (৪৫) উপর দুই সৎ দেবর মনির মৃধা ও দুলাল মৃধা অমানুষিক নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত ভাবীকে স্বজনরা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। আমেনাকে নির্যাতনের দৃশ্য এলাকার শত শত মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী এ ঘটনার সাথে জড়িত মনির ও দুলাল মৃধার দ্রুত বিচার দাবী করেছেন। ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার উপজেলার কালিপুরা গ্রামে।
স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, উপজেলার কালিপুরা গ্রামের মৃত্যু জাকির হোসেন মৃধা পৈত্রিক সূত্রে ৩৩ শতাংশ জমি পেয়েছে। ওই জমির সাড়ে ১৬ শতাংশে তার স্ত্রী আমেনা বেগম বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। কিন্তু অপর সাড়ে ১৬ শতাংশ জমি সৎ দেবর মনির ও দুলাল মৃধা নিজেদের জমি দাবী করে আমেনাকে ভোগ দখল করতে দিচ্ছে না। গত দুই বছর ধরে ওই জমির চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে বিধবা আমেনা বেগমের সাথে এ জমি নিয়ে সৎ দেবর মনির ও দুলালের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মনির ও দুলাল মৃধাসহ ৬-৭ জনে আমেনা উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আমেনাকে দুই ননদ মিনি ও জাকিয়া জাপটে ধরে হাত ও পা বেঁধে ফেলে এবং মনির ও দুলাল মৃধা গাব গাছের লাঠি দিয়ে বেধরক মারধর করে বিবস্ত্র করে ফেলে। কয়েক দফায় তার উপর নির্যাতন চালায় তারা। তাদের নির্যাতনে আমেনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাকে নির্যাতনের দৃশ্য এলাকার শত শত মানুষ দাড়িয়ে প্রত্যক্ষ করে। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যেতে সাহস পায়নি। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। এলাকাবাসী এ ঘটনার সাথে জড়িত দুলাল ও মনির মৃধাকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার দাবী করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী লিমন হোসেন বলেন, মনির ও দুলালসহ ৬-৭ আমেনাকে গাব গাছের লাঠি দিয়ে বেধরক মারধর করেছে। তাকে মারধরের দৃশ্য এলাকার শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে দেখলেও দুলাল ও মনিরের ভয়ে কেউ তাকে উদ্ধার করতে যেতে সাহস পায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, মনির ও দুলাল মৃধাসহ ৬-৭ জনে বড় বিধবা ভাবী আমেনাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। কয়েক দফায় তারা বিধবা ভাবীর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের নির্যাতনে ভাবী জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও তারা নির্যাতন বন্ধ করেনি। তাকে রক্ষায় স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে তাদেরকেও দুই ভাই মনির ও দুলাল অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত মনির ও দুলালকে গ্রেফতার করে বিচার দাবী করেছেন।
বিধবা ভাবী আমেনা বেগম কান্নাজনিত কন্ঠে সাগরকন্যাকে বলেন, আমার স্বামী জাকির হোসেন মৃধা ২০১৫ সালে মারা গেছেন। আমি চার মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছি। আমার শ্বশুরের পাওয়া ৩৩ শতাংশ জমি আমি ভোগদখল করতাম। কিন্তু গত দুই বছর আগে আমার সৎ দেবর মনির ও দুলাল মৃধা তাদের জমি দাবী করে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছে। গত দুই বছর ধরে ওই জমি আমাকে চাষাবাদ করতে দেয় না। এ নিয়ে মঙ্গলবার আমার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় মনির ও দুলাল মৃধাসহ ৬-৭ জনে আমাকে বেঁধে গাব গাছের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে। তিনি আরো বলেন, আমি অসহায়, আমাকে ওরা বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। আমি আমার ছেলে সন্তান নিয়ে কোথায় যাব? আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
দুলাল মৃধার ভাগ্নে ইমাম হোসেন বলেন, মামি আমেনাকে দুই মামা মারধর করেছে বলে শুনেছি।
এ বিষয়ে দুলাল মৃধার সাথে তার মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার গৌড়াঙ্গ হাজড়া বলেন, ওই মহিলার সারা শরীরে রক্তাক্ত জথমের চিহ্ন রয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার, এ বিষয়ে কেউ আমাকে অভিযোগ দেয়নি। এখনই এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এইচএকে/এনবি