কলাপাড়ায় সমাজসেবা অফিসের স্বেচ্ছাচারিতায় ভাতা পেতে বিড়ম্বনা

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কলাপাড়ায় সমাজসেবা অফিসের স্বেচ্ছাচারিতায় ভাতা পেতে বিড়ম্বনা
বৃহস্পতিবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২০


প্রতীকী ছবি

কলাপাড়া সাগরকন্যা অফিস॥
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, দলিত হরিজনদের ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষাবৃত্তির সুবিধাভোগীরা সরকারের দেয়া আর্থিক সুবিধা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সরকারের দেয়া সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর এসকল প্রাপ্য সুবিধা পেতে ভুক্তভোগীদের দিনের পর দিন কাউন্সিলর, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট আর্থিক সেবাদানকারী সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকে পর্যাপ্ত তহবিল থাকার পরও রহস্যজনক কারণে সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব সুবিধাভোগী মানুষ যথাসময়ে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেনা। এনিয়ে কলাপাড়া শহর সমাজ সেবা অফিসার বলেন, ষ্টাফ সংকটে একটু দেরী হয়েছে। ইউএনও বললেন, সরকারী দায়িত্ব পালনে গাফেলতির দরুন অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। সমাজ সেবা জেলা উপ-পরিচালক বললেন, ইতোমধ্যে তাকে কয়েকবার শোকজ করা হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় পরিবারগুলোর এসকল ভাতাভোগীদের অসহায়ত্বের চিত্র দেখে স্থানীয় সাংসদ ও ইউএনও এগিয়ে আসায় দীর্ঘদিন পর ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের ভাতাদি পেয়েছেন তারা। সম্প্রতি লকডাউনের মধ্যে খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রচন্ড খরতাপে সমাজিক দূরত্ব রক্ষা না করে ঘন্টার পর ঘন্টা এসকল সেবা গ্রহীতাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ভাতাদি দেয়া হয়। বয়স্ক এসকল মানুষের অভিব্যক্তি ছিল, ‘দুই বচ্ছর ঘুইর‌্যা ভাতাটাহা নেতে বেইন্যাহালে আইয়া দুহুইর অইয়া গ্যাছে।’ এছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সরকারের নির্দেশনায় নতুন সেবা গ্রহীতাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও নানান অজুহাতে অদ্যবধি  পৌরশহরের ৫১ জন বয়স্ক, ৬৭ বিধবা, ৫৫ প্রতিবন্ধী ও ৬৯ প্রতিবন্ধী শিক্ষাবৃত্তির ভাতাদি বিতরণ করা হচ্ছেনা। যদিও তাদের জন্য সরকার ২০১৯ সালের জুলাই থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে। এসব মানুষের অসহায়ত্বের চিত্র দেখে শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উম্মুক্ত স্থানে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরীতে স্বচ্ছতা না থাকায় যা অনুমোদন হয়নি। এসব ক্ষেত্রে অজুহাত দেখানো হয় অফিস সহকারী মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছে। সুবর্ন নাগরিকদের পরিচয়পত্র সরবরাহ করা যায়নি। অফিসের পৌর সমাজকর্মী, অফিস সহায়ক ও নৈশ প্রহরীর পদ শূন্য রয়েছে। বারবার জনবল চেয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েও কোন ফল হয়নি বলে দাবি করা হয়।

উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৭০৬২ জন বয়স্ক ভাতা সুবিধা ভোগী, ৩৬৪২ বিধবা, ২৪১৬ প্রতিবন্ধী, ২০০ দলিত হরিজন ও ১৭০ প্রতিবন্ধী শিক্ষা বৃত্তির সুবিধাভোগী রয়েছে। শহর সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পৌরশহরে ৫৭৭ জন বয়স্ক ভাতা সুবিধা ভোগী, ৩৫১ বিধবা, ১৩০ প্রতিবন্ধী, ১০২ দলিত হরিজন ও ৬৯ প্রতিবন্ধী শিক্ষা বৃত্তির সুবিধাভোগী রয়েছে। এসব সুবিধাভোগীদের মধ্যে বয়স্করা প্রতিমাসে ৫০০, বিধবা ৫০০, প্রতিবন্ধী ৭৫০, দলিত হরিজন ৫০০ এবং প্রতিবন্ধী প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা বৃত্তি ৭০০, মাধ্যমিক ৭৫০, উচ্চ মাধ্যমিক ৮৫০ ও ¯œাতক ১২০০ টাকা হারে বৃত্তি সুবিধা পাচ্ছেন।

এদিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর এসব মানুষকে সরকার যথাসময়ে ভাতার অর্থ বরাদ্দ দিলেও সমাজ সেবা অফিসের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাবে যথাসময়ে এরা প্রদেয় অর্থ সহায়তা পাচ্ছেনা। পাশাপাশি গাফেলতির কথা উঠেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধেও। এছাড়া সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরী, বাছাই ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনগ্রসর এসব মানুষকে জিম্মি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের মহতী উদ্দোগ। দিনের পর দিন কাউন্সিলর, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান সহ উপজেলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিতে দেখা গেছে অসহায় এসব মানুষকে। উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের পুরান মহিপুর গ্রামের শারিরীক প্রতিবন্ধী বয়োবৃদ্ধ ইসমাইল কারী চূড়ান্ত বাছাইয়ে টিকে গত দুই বছর ধরে সমাজ সেবা অফিসে ধরনা দিচ্ছেন ভাতার বই পেতে। কিন্তু নানান অজুহাতে তাকে অদ্যবধি বই সরবরাহ করা হয়নি। ইসমাইল কারীর মত এরকম অনেক মানুষের বোবা কান্না সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের কান অবধি পৌঁছায় না।

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এসব সেবা সুবিধা পেতে কাঠ খড় পোড়ানো নিয়ে জানতে চাইলে শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো: জিয়াবুল হাসান বলেন, ‘অফিসে জনবল সংকট রয়েছে। অফিস সহকারী সুমাইয়া রহমান ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, সুবর্ন নাগরিকদের পরিচয়পত্র সরবরাহ করা যায়নি। নতুন তালিকাভূক্তদের অর্থ ছাড়ের ৩১জুলাই পর্যন্ত সময় রয়েছে। তদুপরী উপজেলা প্রশাসন সহ স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরা এনিয়ে আমাকে হেনস্থা করছে।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান বলেন, সুবিধাভোগীরা ভাতার টাকা যথাসময়ে পাচ্ছেন। মহিপুরের প্রতিবন্ধী ইসমাইল কারীর ভাতার বইটিতে স্বাক্ষর না হওয়ায় এটি সরবরাহ করা হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে এটি তাকে সরবরাহ করা হবে।

জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শিলা রানী দাস সাগরকন্যাকে বলেন, শহর সমাজ সেবা ঠিক মত মাসিক রিপোর্ট দিতে না পারায় তাকে একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে। তিনি শোকজের জবাব দেননি। এছাড়া সমাজ সেবা অধিদপ্তর তাকে দীর্ঘ দিন সাসপেন্ড করে রেখেছিলেন। তদুপরি অসহায় মানুষের ভাতাদি যাতে যথা সময়ে পায় এ বিষয়ে আমরা বদ্ধ পরিকর। এতে কোন ব্যত্যয় হলে ছাড় দেয়া হবেনা।

ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন,  এমপি সাহেবের হস্তক্ষেপে শহরের সুবিধাভোগীরা দুই অর্থ বছরের ভাতার টাকা একত্রে পেয়েছেন। শহর সমাজ সেবা অফিসারের গাফেলতির বিষয়টি অবগত হয়ে অসহায় মানুষের ভাতা সুবিধা পেতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে অর্থ ছাড়ের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।  ইউএনও আরও বলেন, ‘অসহায় মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করার জন্য শহর সমাজ সেবা অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ তাকে অন্যত্র বদলীর জন্য লিখিতভাবে সমাজ সেবা মন্ত্রণালয়ের মহা পরিচালক বরাবর চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০০:৪২ ● ৪৬৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ