আমতলীতে মুক্তিযোদ্ধার তিন সন্তানকে কুপিয়ে জখম

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে মুক্তিযোদ্ধার তিন সন্তানকে কুপিয়ে জখম
বৃহস্পতিবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২০


আমতলীতে মুক্তিযোদ্ধার তিন সন্তানকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সন্ত্রাসী সাইদুল আকন ও তার বাহিনীর লোকজন মুক্তিযোদ্ধার তিন সন্তানকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। আহত তিনজনের মধ্যে জাকির হোসেন সিকদার নামের একজনকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও রোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ডান পা গুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ঘটনা ঘটেছে বুধবার রাতে আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের উত্তর তারিকাটা গ্রামে।
জানাগেছে, উপজেলার উত্তর তারিকাটা গ্রামের সামসু আকনের কাছ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যু হাতেম আলী সিকদারের ছেলে জাকির সিকদার ও তোফাজ্জেল সিকাদর ১৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে। ওই জমিতে তারা বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। বুধবার সকালে জাকির সিকদার তার ওই বাড়ীর একটি চাম্বল গাছ কাটতেছিল। এ সময় সামসু আকনের ছেলে সাইদুল আকন ও তার সহযোগী সিদ্দিক আকন, রাশেদ আকন ও সবুজ আকন ওই গাছ কাটতে তাকে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে জাকিরের সাথে সাইদুলের কথা কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয় সাইদুল। এ নিয়ে স্থানীয় হাবিবুর রহমান মাতুব্বরের মধ্যস্থতায় ওই দিন রাতে আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারে শালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তোফাজ্জেল সিকদার ওই শালিস বৈঠকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে আড়পাঙ্গাশিয়া ঈদগা ময়দান সংলগ্ন স্থানে গেলে চারটি মোটর সাইকেলে ১০-১২ জন দলের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী এসে তাকে ঘিরে ফেলে এবং  লোহার রড দিয়ে বেধরক পিটিয়ে গুরুতর জখম করে রাস্তায় ফেলে রাখে। খবর পেয়ে ছোট ভাই জাকির সিকদার ঘটনাস্থলে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ব্রিক ফিল্ডের কাছে তাকে পেয়ে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ডান পা গুড়িয়ে দিয়েছে। তার ডাক চিৎকারে বোন নুননেহার ও  ভাবি সালমা বেগম এগিয়ে আসলে তাদেরও কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে এবং তাদের সাথে থাকা স্বর্নালংকার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। স্বজনরা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করেন। ওইদিন গভীর রাতে তাদের  শেবাচিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ওই হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধা হাসেম সিকদারের তিন সন্তান চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে সন্ত্রাসীরা তাদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে যাওয়ার সময় শাসিয়ে যায় এ নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে পরবরর্তিতে হত্যা করে লাশ পায়রা নদীতে ফেলে দেয়া হবে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ ওইরাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, সাইদুল আকন এলাকায় মাদক বিক্রিসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। তার অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।
আহত জাকির সিকদার বলেন, সামসু আকনের কাছ থেকে ১৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেছি। ওই জমিতে আমি বাড়ীঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছি। বুধবার ওই বাড়ীর একটি চাম্বল গাছ কাটতে গেলে সামসু আকনের ছেলে মাদক বিক্রেতা সন্ত্রাসী সাইদুল আকন ও তার সহযোগী সিদ্দিক আকন, রাশেদ আকন ও সবুজ আকন আমাকে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে বুধবার রাতে শালিস বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। শালিস বৈঠকে যাওয়ার পথে আমার ভাইকে পিটিয়ে জখম করে রাস্তায় ফেলে রাখে। তাকে রক্ষায় আমি এগিয়ে গেলে আমাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ডান পা গুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাকে রক্ষায় আমার বোন ও বড় ভাবি এগিয়ে আসলে তাদেরকেও কুপিয়ে জখম করেছে তাদের সাথে থাকা স্বনাংলকার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে সন্ত্রাসী সাইদুল আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তার ভয়ে আমার পরিবারের লোকজন খুবই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।  আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে সাইদুল আকনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি। শালিস বৈঠকে মধ্যস্থতাকারী হাবিবুর রহমান মাতুব্বর বলেন, শালিস বৈঠক আসার পূর্বেই জাকির ও তার ভাই ও বোনকে মেরেছে শুনেছি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোঃ সুমন খন্দকার বলেন, জাকির সিকদারের ডান পায়ের হাটুর নিচে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে। আর অপর দু’জনের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পিটানোর চিহৃ রয়েছে। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৮:০৩ ● ৭০৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ