বাউফল (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সরকারের কোন নির্দেশনাই মানছেন না বাউফলের আমজনতা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীন আবেদন-নিবেদন কিছুই যেন কর্ণপাত হচ্ছে না ব্যাবসায়িসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের। এদিকে নৌযান সহ সকল ধরণের যানবাহনেই যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ থাকলেও এক শ্রেণির লোভি ড্রাইভার এবং গ্রামীণ জনপদের কিছু ট্রলার মালিক অর্থের লোভে সে নিষেধাজ্ঞাও মানছেন না। ফলে সামাজিক দুরত্বতো দুরের কথা শরিরের সাথে শরির মিশিয়ে হাট-বাজারে অবাধে চলছে বেচা কেনা। ট্রাক এবং ট্রলারে অবাধে চলছে যাত্রী পরিবহন।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) সরেজমিন দেখা গেছে, বেলা ১০ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন উপজেলার বৃহত্তম বাজার কালাইয়া বন্দরে এসে মিলন ও চান মিয়া নামের লেপ-তোষকের দু’জন দোকানদারকে দোকান খোলা রাখার দায়ে আটক করেন। দু’চার জন মটর সাইকেল ড্রাইভারদের ভৎসনা করে ফিরিয়ে দেন। কাঁচা বাজার ও মাছ বাজারে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বেচা কেনার নির্দেশনা দেন। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পরপরই আবার যেন মানুষ হুমরি খেয়ে পড়ছে দোকানে দোকানে। সেনা বাহিনী এসে মাইকিং করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহবানের সময় রাস্তাঘাট মানুষ শূণ্য হয়ে যায়। কিন্তু চলে গেলেই আবার পূর্বাবস্থা। পুলিশ রিক্সা, মটর সাইকেল, অটোসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনের চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশনা দিলেও তারা চলে গেলে আগের রুপেই ফিরে আসে রাস্তাঘাট আর দোকানপাট। এ যেন লুকোচুরি খেলায় মেতেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আর সাধারন মানুষ। ব্যাংকগুলোতেও মানা হচ্ছে না সামজিক দুরত্ব বিধি। সব ধরণের যানবাহনে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ থাকলেও কালাইয়া-ঢাকাগামী মাছের ট্রাকে অবাধে আসা যাওয়া করছে অতিরিক্ত মানুষ। কালাইয়ার মাছের আরৎগুলো থেকে ঢাকায় মাছ পরিবহনের জন্য ঢাকা থেকে যে ট্রাকগুলো আসে সেগুলোতে নামমাত্র পণ্য ভরে গোপাণে প্রতিজন দুই থেকে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে মানুষ পরিবহণ করছে।
বাউফলসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল থেকে ট্রলারে তরমজু বোঝাই করে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চাঁদপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আসার সময় ওই এলাকাগুলো থেকে মোটা অংকের বিনিময়ে মানুষ পরিবহন করা হচ্ছে। বাউফলের বাউফলের বিভিন্ন ট্রলার মালিকরা অর্থের বিনিময়ে পাশ্ববর্তী ভোলা ও বরিশাল থেকে মানুষ পরিবহন করছে। সোমবার কালাইয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের আটজন ট্রলার মালিককে আটক করেছেন। পরে বাউফলের সহকারি কমিশনার(ভূমি) মো. আনিচুর রহমান বালি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে প্রত্যেককে পাঁচশত টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দেন। আপরদিকে মিলন ও চান মিয়া নামের দুই লেপ-তোষকের দোকানদারকেও পাঁচ শত টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দেন। এছাড়াও রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিারও বার বার নিয়ম মেনে চলার জন্য জনগণের প্রতি আবেদন নিবেদন করে যাচ্ছেন কিন্তু মানুষকে কোন ভাবেই মানানো যাচ্ছে না ঘরে থাকা এবং সামাজিক দুরত্ব বিধি। এদিকে এক শ্রেণির ব্যাবসায়িরা নিত্যপণ্য গুদামজাত করে অধিক মুনাফা করে মালামাল বিক্রি করছে। এর মধ্যে রয়েছে, চিরা-মুরি, চিনি, ডাল, পিয়াজ, সিগারেট প্রভৃতি। এছাড়া কালাইয়া বাজারে প্রায় ১০টি দোকানে ঢাকার ফতুল্লা এবং নারায়নগঞ্জ থেকে আনা বিএসটিআই’র অনুমোদনহীন অস্বাস্থ্যকর বিস্কুট, চানাচুরসহ নানা ধরণের শিশু খাদ্য পাইকারি ও খচরা বিক্রি করছে। চৈত্র কিংবা বৈশাখের প্রচন্ড গড়মে এই খাবারগুলো খেকে ডায়রিয়াসহ নানা ধরণের রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এগুলোর প্রতি প্রশাসনের কোন নজরদারিও নেই। বাউফলের সচেতন মহল বলেন, আমাদের পার্শ¦বর্তী দুমকিতে দুজনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। এরমধ্যে একজন মারা গেছে। আরেকজন চিকিৎসাধিন রয়েছে। দুমকি থেকে বাউফলে অনেক মানুষ আসা যাওযা করছে। সেই দিক থেকে বাউফলও এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের মতে প্রশাসনের আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
এপি/এমআর