আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিপাকে পড়েছে আমতলী উপজেলার দুগ্ধ খামারীরা। দুধ বিক্রি করতে না পেরে লোকসানে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। দুগ্ধ খামারীদের বাঁচিয়ে রাখতে গরুর খাদ্য সহায়তাসহ খামারীদের বিশেষ সহযোগীতার দাবী জানিয়েছেন তারা। নিরুপায় হয়ে মানুষের মাঝে দুধ বিতরণ করছেন খামারীরা।
আমতলী প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলায় ১১টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। এ খামারগুলোতে শঙ্করায়ণ জাতের (হলেষ্টাইন ফ্রিজিয়ান) এক’শ ৫০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি গরু দুগ্ধজাতের। প্রতিটি গরুতে দিনে অন্তত ১৫-২৫ লিটার দুধ দেয়। সে হিসেবে ৮০ টি গরু দিনে অন্তত ১৬’শ লিটার দুধ দেয়। ১৬’শ লিটার দুধের দাম প্রায় এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা। করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ শুরু থেকে দুধের চাহিদা কমে গেছে। গত ২৬ মার্চ থেকে খামারীদের দুধ বিক্রি প্রায় বন্ধ রয়েছে। ওই হিসেবে গত ১৮ দিনে দুধ বিক্রি বাবদ খামারীদের লোকসান হয়েছে অন্তত ২০ লক্ষ টাকা। এদিকে প্রত্যেক গরুর খাবারসহ দৈনন্দিন ব্যয় হয় ২৫০ টাকা। ওই হিসেবে দিনে খামারীদের ব্যয় ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। এতে গত ১৮ দিনে ব্যয় হয়েছে অন্তত ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। দুধ ও গরুর খাবার খরচসহ গত ১৮ দিনে খামারীদের লোকসান হয়েছে প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা বলে জানান খামারীরা। দুধের চাহিদা না থাকায় দুধ বিক্রি করতে না পেরে কিছু খামারী লোকসানে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমতলী উপজেলার খামারীদের কোটি টাকা লোকসান হবে বলে জানান লোদা গ্রামের সুজন ডেইরি ফার্মের মালিক মোঃ নজরুল ইসলাম নান্নু আকন। এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে দুধের চাহিদা না থাকায় গরু নিয়ে বিপাকে পরেছেন খামারীরা। এক দিকে গরুর দুধের চাহিদা নেই অন্যদিকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ করলে গরুর ম্যাস্টাডিস রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই রোগের ভয়ে দুধ সংগ্রহ করে খামারীরা বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিতরণ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, খামারীরা খরচ বাঁচাতে গরুর প্রয়োজনীয় খাবার খইর, ভুসি ও ফিড দিচ্ছেন না। তারা গরুকে বাজারের ফিড খাওয়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে গরুর শারীরিক কাঠামো ভঙ্গুর হতে পারে। খামারীরা জানান, উপায় না পেয়ে দুধ কমাতে নিয়মিত খাবার বন্ধ করে দিয়েছে। এতে গরুর শারীরিক কাঠামো ভেঙ্গে যাচ্ছে।
আমতলী পৌরসভার ওয়াবদা মল্লিক ডেইরি ফার্মের মালিক মোঃ চাঁন মিয়া মল্লিক সাগরকন্যাকে বলেন, খামারে ২৫টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি গরু থেকে প্রত্যেকদিন ৮০ লিটার দুধ পাই। কিন্তু করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে দুধের চাহিদা কমে গেছে। তাই দুধ সংগ্রহ করে এলাকার মানুষের কাছে বিনামূল্যে বিতরন করছি। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন দুধ ও গরুর খাবারসহ অন্তত ৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এভাবে চলতে থাকলে গরু বাঁচিয়ে রাখতে কষ্ট হবে। দ্রুত গরু বাঁচাতে সরকারের কাছে বিশেষ সহায়তার দাবী জানাই।
কুকুয়া ইউনিয়নের পুর্ব চুনাখালী গ্রামের সীমা ডেইরি ফার্মের মালিক সাইদুর রহমান হাওলাদার বলেন, দুধ বিক্রি করতে না পেরে গত শনিবার এক লক্ষ টাকা লোকসান দিয়ে বাচ্চাসহ চারটি গরু বিক্রি করে দিয়েছি। অবশিষ্ট তিনটি গরু কিভাবে বাঁচিয়ে রাখবো সেই চিন্তায় আছি।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গাজীপুর গ্রামের আরএন ডেইরি ফার্মের মালিক মোঃ রেজাউল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসে প্রভাবে দুগ্ধ খামারীরা লোকসানে আছে। প্রতিদিন গরুর খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখাই এখন কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। সরকারের কাছে দ্রুত খামারীদের বিশেষ সহায়তার দাবী জানাই।
আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রামণে উপজেলার দুগ্ধ খামীরারা খুবই সমস্যায় আছে। খাবার দিয়ে গরু বাঁচিয়ে রাখাই এখন খামারীদের জন্য কষ্টকর ব্যাপার। খামারীদের বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত সরকারীভাবে বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, সরকারীভাবে বিশেষ সহায়তা পেলে তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে।