কলাপাড়া সাগরকন্যা অফিস॥
করোনার প্রভাবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শাকসবজির দাম বহুগুনে কমে গেছে। রবিবার সবজির পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এসব জানা গেছে। এমনকি ক্রেতা সঙ্কটে অবিক্রিত করলা স্তুপ অবস্থায় পড়ে আছে। যাচ্ছে পচে, নষ্ট হয়ে। অথচ চার/পাঁচদিন আগেও এক কেজি করলা পাইকারি বিক্রি হতো কমপক্ষে ২৫-৩০ টাকায়। আর খুচরা বিক্রি হতো ৪০ টাকায়। যা আজ বিক্রি হয়েছে ১০-১৫ টাকা কেজি দরে। করোনার প্রভাবে উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক ছাড়াও স্থানীয় শ্রমজীবী ৪০ হাজার মানুষ কর্মহীন হওয়ায় সবজিবাজারে এমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর খেসারত দিচ্ছেন সবজিচাষীরা। লোকসান গুনছেন।
পাইকারি আড়তমালিক আল-আমিন জানালেন, আজ রবিবার পাইকারি দর ছিল এক কেজি ঢেড়শ ২০ টাকা, চিচিঙ্গা ১২-১৫ টাকা, বেগুন ২০ টাকা, করলা ১০/১২ টাকা, ঝিঙে ২০ টাকা, মিষ্টিকুমড়ো ১০ টাকা, বরবটি ২০ টাকা, পুইশাক ১০-১২ টাকা, লাউ একটা ১০-১২ টাকা। আর ডাটা শাক কেউ কিনছে না। কলমি শাক এক-দেড় টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এসব শাক-সবজি তিন-চারদিন আগেও গড়ে কেজি প্রতি এর চেয়ে ১০-৩০ টাকা বেশি ছিল পাইকারি দাম। চাহিদাও বহুগুনে কমে গেছে। একাধিক পাইকারি আড়তমালিক জানান, পরিবহন সঙ্কটও একটি কারণ। আগে এ বাজারের শাকসবজি পটুয়াখালী, তালতলী, রাঙ্গাবালী চালঅন হতো। এখন হয়না। এছাড়া সরকারের বিস্ময়কর উন্নয়ন পায়রা বন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রসহ সরকারের বড় বড় উন্নয়ন কর্মের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১০/১২ হাজার শ্রমিক কাজ করত। ওইসব উন্নয়ন কাজ সাময়ীকভাবে বন্ধ রয়েছে। তাঁদের প্রতিদিন কয়েকটন শাক-সবজি বেশি লাগত। তাও এখন বন্ধ রয়েছে। খুচরা বিক্রেতা মো মহসিন জানান, বিক্রি কমে গেছে চার ভাগের তিনভাগ। অনেক আইটেম চলেনা। করলা পচে যাচ্ছে। এভাবে পাইকার, খুচরা বিক্রেতাদের শতাধিক ব্যবসায়ী এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নীলগঞ্জের তিন শতাধিক সবজি চাষী। কুমিরগ্রামের সুলতান গাজী জানালেন তাঁদের এক গ্রামেই শতাধিক সবজি চাষীর এখন লোকসানের পালা শুরু হয়েছে। একই শঙ্কার কথা জানালেন, কৃষক জাকির হোসেন। তাঁদের বক্তব্য করোনার প্রভাবে এবার তারা লোকসানের কবলে পড়েছেন। তবে এসব চাষীর দাবি গ্রীষ্মকালীন ও বর্ষাকালীন আগাম শাকসবজি আবাদের প্রস্তুতির জন্য এখন সরকারিভাবে বীজসহ প্রনোদনার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, করোনার নেতিবাচক প্রভাব অনেকটা পড়েছে সবজিচাষীদের ওপর। সবজিরও চাহিদা কমে গেছে। তবে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারিভাবে কৃষককে সহায়তা করা হবে। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, কলাপাড়ার মোট জনসংখ্যার প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ টন শাক-সবজির প্রয়োজন। এছাড়া উন্নয়ন কাজের সঙ্গে জড়িত বাড়তি ১২ হাজার শ্রমিকের জন্য প্রয়োজন আরও দৈনিক প্রায় তিন টন। এর ওপরে করোনার প্রভাবে কর্মহীন অন্তত ৪০ হাজার পরিবারে অর্থ সঙ্কটে চাহিদামতো শাকসবজি কিনতে পারছে না। বর্তমানে এ পরিমাণ সবজি বাজারে আসলেও বিক্রি হচ্ছে না। অন্য মোকামে চালান করতে না পারাও অন্যতম কারণ। আর এসব কারণে এখন সবজির চাষীসহ বিক্রেতারা করোনার প্রভাবে অনেকটা লোকসানের কবলে পড়েছেন।
এমইউএম/এনবি