আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ রোধে সরকারের অঘোষিত লকডাইন উপেক্ষা করে বুধবার রাতে ট্রলার যোগে কেরানীগঞ্জ থেকে ১০৯ জন ইটভাটির শ্রমিক বরগুনার আমতলীতে আসেন। খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীনের নেতৃত্বে ওসি শাহ আলম হাওলাদার তাদের আটক করে বুধবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে আমড়াগাছিয়া খানকায়ে ছালেহিয়া কমপ্লেক্সে সাইক্লোণ সেল্টারের কোয়ারেন্টাইনে রেখেছেন। কোরানীগঞ্জ থেকে আমতলীতে লোক আসার খবরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার কয়েক হাজার শ্রমিক কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ইটভাটিতে শ্রমিকের কাজ করেন। গত সোমবার ইটভাটির মালিকরা শ্রমিকদের ছেড়ে দেয় এবং বাড়ী যেতে বলে। নিরুপায় হয়ে শ্রমিকরা করোনা ভাইরাস সংক্রামণ রোধে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন উপক্ষো করে এমভি সজিব- শাকিব পরিবহনের একটি ট্রলার ভাড়া করে। ওই ট্রলারটি ১’শ ৯ জন শিশু, নারী ও পুরুষ যাত্রী নিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে মঙ্গলবার রাতে আমতলীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া নদীর মগরার ব্রীজের নিকট ট্রলারটি নোঙ্গর করে। স্থানীয় ইলিয়াস মিয়ার ট্রলারে অনেক লোকজন দেখে সন্দেহ হয়। পরে সে (ইলিয়াস) লোকজন নিয়ে ওই ট্রলারের লোকজন কিনারে উঠতে নিষেধ করে এবং পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমতলী থানার ওসি শাহ আলম হাওলাদার ও এএসপি সৈয়দ রবিউল ইসলাম (আমতলী-তালতলী সার্কেল) পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে শিশু, নারী ও পুরুষসহ ১’শ ৯ জনকে আটক করে। পরে ওইদির রাত ২ টার দিকে ইউএনও মনিরা পারভীন ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে আটককৃত ১’শ ৯ জনের মধ্যে ৮৯ জনকে আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া খানকায়ে ছালেহিয়া কমপ্লেক্সের সাইক্লোণ সেল্টারের কোয়ারেন্টাইনে রাখেন এবং ২০ জন পটুয়াখালীর অধিবাসী হওয়ায় তাদের পটুয়াখালী প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা ৮৯ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী, ডাঃ এমদাদুল হক চৌধুরী ও এবিএম তানজিরুল ইসলাম চিকিৎসা দেন। চিকিৎসকরা বলেন, আগত ৮৯ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের কোন লক্ষণ নেই। এদিকে আগত শিশু ও নারীদের কান্নায় এলাকা প্রকম্পিত হয়। তারা দুই দিন ধরে না খেয়ে আছেন। পরে আমতলী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়।
কেরানীগঞ্জ থেকে আসা ইব্রাহিম, শহীদুল ইসলাম ও খলিলুর রহমানসহ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, গত সোমবার হঠাৎকরে ইটভাটির মালিক মজুরী না দিয়ে আমাদের ছুটি দিয়ে বাড়ীতে যেতে বলে। আমরা অনুনয় বিনয় করলেও তারা আমাদের কথা শুনেনি। তারা উল্টে বলে এলাকা না ছাড়লে পুলিশে ধরিয়ে দিবে। নিরুপায় হয়ে ১’শ ৯ জনে একটি ট্রলার ভাড়া করে আমতলীতে এসেছি। এখানে এসেও পুলিশের হাতে ধরা খেলাম।
নারী শ্রমিক খাদিজা ও রেহেনাসহ কয়েক জন কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, গত দুইদিন ধইর্যা মোরা কিছুই খাইনি। ক্ষুধার জ্বালায় টেকতে পারি না। মোগো আপনেরা বাঁচান। আল্লায় কোন গজব দেছে।
সোনাখালী গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী ইলিয়াস মিয়া বলেন,রাতে ট্রলারে লোকজন দেখে আমার সন্দেহ হয়। পরে আমি ওই ট্রলারের লোকজনকে কিনারে উঠতে নিষেধ করি। কিন্তু তারা আমার কথা শুনছে না। পরে পুলিশকে খবর দেই। পুলিশ এসে তাদের আটক করেছে।
সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ট্রলারে লোক আসার খবরে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে।
সজিব-শাকিব ট্রলার শ্রমিক মোস্তফা সিকদার বলেন, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ১’শ৯ জন যাত্রী নিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে আমতলীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছি। ২২ ঘন্টা ট্রলার চালিয়ে আমতলীতে এসেছি। তিনি আরো বলেন, ট্রলার মাঝি বেল্লাল হোসেনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছেন। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ট্রলার এখানে নোঙ্গর করে রাখতে হবে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, খবর পেয়ে আমড়াগাছিয়া খানকায়ে কমপ্লেক্সে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রাখা ৮৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নেই।
আমতলী থানার ওসি শাহ আলম হাওলদাার বলেন, কেরানীগঞ্জ থেকে আসা শ্রমিকদের আটক করে আমড়াগাছিয়া ছালেহিয়া কমপ্লেক্সের সাইক্লোণ সেল্টারে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক পুলিশ মোতায়েন করা থাকবে।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, আমতলী উপজেলার মানুষকে নিরাপদে রাখতে সকল প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, কেরানীগঞ্জ থেকে আসা লোকজনকে সর্বাত্ত্বক সহযোগীতা করা হবে কিন্তু তাদের কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিার পারভীন বলেন, কেরানীগঞ্জ থেকে আসা ১০৯ জনের মধ্যে ৮৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এবং ২০ জন পটুয়াখালীর অধিবাসী হওয়ায় পটুয়াখালী প্রশাসনের কাছে তাদের হস্তান্তর করেছি। তিনি আরো বলেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকা সকলকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা হবে। তারা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।
এমএইচকে/এমআর