আমতলী থানা হাজতে মৃত্যুঃ পরিদর্শকের (তদন্ত) বিরুদ্ধে মামলা

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলী থানা হাজতে মৃত্যুঃ পরিদর্শকের (তদন্ত) বিরুদ্ধে মামলা
বৃহস্পতিবার ● ২ এপ্রিল ২০২০


নিহত শানু হাওলাদার

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী থানা পুলিশ হেফাজতে একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামী শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সাময়ীক বরখাস্তকৃত ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির বিরুদ্ধে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসানে বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন (পিপিএম)’র কাছে দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার রাতে এ মামলা হয় এবং মামলাটি তদন্তের জন্য বরগুনা ডিবির (ওসি) মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামে গত বছর ৩ নভেম্বরে ইব্রাহিম নামের একজন কৃষককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যা মামলায় শানু হাওলাদারের সৎ ভাই মিজানুর রহমান হাওলাদার এজাহারভূক্ত আসামী। ওই মামলার শানু হাওলদারকে ২৩ মার্চ রাত সাড়ে এগারটায় সহেন্দভাজন আসামী হিসেবে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। তাকে থানার আনার পর থেকে আমতলী থানা ওসি আবুল বাশার (প্রত্যাহার) ও ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি (সাময়ীক বরখাস্ত) আসামীর পরিবারের কাছে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। ওই টাকা দিতে অস্বীকার করে তার পরিবার। টাকা না পেয়ে আসামী শানু হাওলাদারকে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করে। নির্যাতন সইতে না পেয়ে আসামীর ছেলে সাকিব হোসেন ২৪ মার্চ ওসি আবুল বাশারকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দেয়। কিন্তু তাতে তিনি তুষ্ট হয়নি। নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। ২৫ মার্চ পরিবারের লোকজন এসে আসামী শানু হাওলাদারের সাথে দেখা করতে চাইলে পুলিশ দেখা করতে দেয়নি উল্টো পরিবারের লোকজনের সাথে অশ্লীল আচরণ করে তাড়িয়ে দেয় এমন অভিযোগ নিহতের ছেলে সাকিব হোসেনের। গত ২৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সকাল  সোয়া ছয়টার দিকে  আসামী শানু শৌচাগারে যাওয়ার কথা বললে পুলিশ তাকে শৌচাগারে নিয়ে যায়। পরে এক ফাঁকে আসামী শানু হাওলাদার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির কক্ষে ফ্যানের সাথে রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে  দাবী করেন ওসির আবুল বাশার। ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জনের কক্ষ থেকে অর্ধনগ্ন শানুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনা তদন্তে বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন পিপিএম এবং বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার-ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) পিপিএমএর পক্ষ থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশের তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার দায়ে তাৎক্ষনিক বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার এএসআই আরিফুর রহমানকে  সাময়িক বরখাস্ত করেছেন এবং ২৭ মার্চ পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের এক আদেশে বরিশাল ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম নির্দেশে বরগুনা পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন পিপিএম স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওসি আবুল বাশারকে আমতলী থানা থেকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। এদিকে গত মঙ্গলবার ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বরগুনা পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই আইনজীবির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার রাতে বরগুনার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন আমতলী থানার ওসি শাহ আলম হাওলাদারকে মামলাটি গ্রহনের নির্দেশ দেয়। আমতলী থানার ওসি সাময়ীক বরখাস্তকৃত ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন ২০১৩ এর ১৫ ধারা মোতাবেক নিয়মিত মামলা দায়ের করেন এবং ওই মামলাটি তদন্তের জন্য বরগুনা ডিবি (ওসি) মোঃ হারুন অর রশিদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, পুলিশ হেফাজতে আসামী মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ইশরাত হাসানের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরগুনা পুলিশের নির্দেশে আমতলী থানায় সাবেক ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির (সাময়ীক বরখাস্ত) বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন ২০১৩ এর ১৫ ধারায় নিয়মিত মামলা করা হয়। তিনি আরো বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য বরগুনার ডিবি (ওসি) মোঃ হারুন অর রশিদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা ডিবির (ওসি) মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদার বলেন, মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছি।

এইচএকে/এনবি

বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৫:২৫ ● ৩৯৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ