কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
১০টাকা কেজি দরে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের চাল বিক্রিতে চলছে অরাজকতা। কলাপাড়ায় ৩২ জন ডিলার এ চাল বিক্রিতে নিয়োজিত রয়েছে। এসব ডিলারের কাছে এ বছরের মার্চ মাসের চাল বিক্রির কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে মার্চ মাসের চাল বিক্রির খাতাপত্রের হিসাব শেষ করছেন। বছরের মার্চ-এপ্রিল ছাড়াও সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর মাসে ১০টাকা কেজির চাল বিতরণ করা হয়। ৩২ ডিলার যেন যথাযথভাবে প্রত্যেক কার্ডধারীতে ৩০ কেজি করে চাল ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে তা নিশ্চিত করবেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে তালিকাভুক্ত কার্ডধারীদের এক পঞ্চমাংশ কোন চাল পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ চাল কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে।
কলাপাড়া খাদ্য বিভাগসুত্রে জানা গেছে, কলাপাড়ায় মোট ২০ হাজার ১৫৩ কার্ডধারী ১০টাকা কেজি দরে প্রতেকে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন। অভিযোগ রয়েছে এর মধ্যে অন্তত চার হাজার কার্ড রয়েছে ভুয়া। আবার তালিকায় নাম রয়েছে তিনি নিজেও জানেন না। সুবিধাভোগীদের কাছে কার্ডগুলো থাকার কথা। কিন্তু শত শত কার্ড ডিলারের কাছে থাকছে। নির্দেশনা রয়েছে ডিলারের দোকানে কার্ডধারীর নামের তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হবে। কিন্ত ডিলারের দোকানে এটি দৃশ্যমান পাওয়া যায়না। আর ডিলাররা অধিকাংশ ব্যবসায়ী নয়। সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব চাল নিয়ে করছে অরাজকতা। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধির আত্মীয়-সজন, বিত্তশালী শত শত মানুষের নাম রয়েছে এ তালিকায়। সবচেয়ে বেশি অরাজকতা হয়েছে মার্চ মাসের ফেয়ার প্রাইস কার্ডেও চাল বিতরণে। পুরনো ইউএনও মো. মুনিবুর রহমানের বদলী এবং নবাগত ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হকের যোগদানের ব্যস্ততার মধ্যে করোনার আঘাতের কারনে ৩২ ডিলার তাঁদের ইচ্ছেমতো এচাল নিয়ে চালবাজি করেছেন। তদারকি কর্মকর্তাদের উদাসীনতা রয়েছে। সরকারের খাদ্যবান্ধব এ কর্মসূচি গরিব মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু ডিলারদের চুরির মানসিকতায় জনবান্ধব কর্মসূচির সুনাম সরকার ঘরে তুলতে পারছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ ধণাঢ্য প্রভাবশালীদের অসংখ্য নাম রয়েছে এ তালিকায়। এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে। এছাড়া কার্ড যার যার হাতে নেই। ডিলারদের কাছে থাকা। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের মাখন লাল বিশ^াসের নাম রয়েছে এই তালিকায়। যার ক্রমিক নম্বর ২৫৫। এ দরিদ্র মানুষটি মার্চ মাসের ১০ টাকা কেজির কোন চাল পায়নি। তার কার্ডটি পর্যন্ত নেই। কবে চাল পেয়েছেন তা তার মনেও নেই। অথচ নীলগঞ্জের ২৭৬৭ জনের সকলের বিতরণের মার্চ মাসের চাল তিনজন ডিলার তুলে নিয়ে বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে। একই দশা মিঠাগঞ্জের ৬৫০ নম্বর তালিকার ব্যক্তির। তার নিজেরও জানা নেই তার নামে ১০ টাকা কেজির চাল উত্তোলন করা হয়। এ ইউনিয়নে ১১০৫ জন ১০ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। সব কয়টি ইউনিয়নের একই দশা। এসব তালিকা প্রকাশ্যে টানিয়ে দিলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে বলে সচেতনমহলের দাবি। মোট কথা সরকারের গরীব জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো দুর্নীতিবাজ একটি সিন্ডিকেটের কারণে ভেস্তে যাচ্ছে। মানুষ যেমনি সুবিধা পায়না। তেমনি সরকারের ঘরে সুফল পৌছে না।
কলাপাড়া উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা (আতিরিক্ত দায়িত্ব) বিএম শফিকুল ইসলাম জানান, অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে তালিকা সংশোধন করা হয়। এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এমইউএম/এমআর