আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পছন্দের পাত্রীর সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় অভিমান করে মোবাইল টাওয়ারে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে আবদুল্লাহ আল মীম নামের এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র। মীমের আত্মহত্যা চেষ্টার এ দৃশ্য দেখলো কয়েক হাজার মানুষ। আমতলী পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমানের উদ্যোগে পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সাড়ে তিন ঘন্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে শেষ পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে যায় অভিমানী কলেজছাত্র আল মীম। ঘটনা ঘটেছে আমতলী পৌর শহরের ফায়ার সার্ভিস এলাকায় এয়ারটেল কোস্পানীর মোবাইল টাওয়ারে সোমবার রাতে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের সদর রোডের ফল ব্যবসায়ী বাহাদুর জোমাদ্দারের ছেলে আবদুল্লাহ আল মীম আমতলী সরকারী কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ওই ছাত্রের সাথে আমতলী আইডিয়াল স্কুলের এক ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ওই পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবে বলে বাবা-মাকে চাপ দেয় আল মীম। কিন্ত তারা ওই স্কুল ছাত্রীর সাথে মীমের বিয়ে দিতে রাজি নয়। এ ঘটনা নিয়ে সোমবার দুপুরে ছেলে আবদুল্লাহ আল মীম এবং বাবা বাহাদুর জোমাদ্দার ও মা লাইলি বেগমের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বাসার আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং বাবাকে লাঞ্ছিত করে বাসা থেকে বের হয়ে যায় আল মীম। বিকেল চারটার দিকে আমতলী পৌরসভার গাড়ি চালক মোঃ মনির হোসেন দেখতে পায় আল মীম আমতলী ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন এয়ারটেল কোম্পানীর ৩শ’ ফুট উচু টাওয়ারে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। তাৎক্ষনিক মনির তাকে আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষায় আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমানকে জানায়। পৌর মেয়র দ্রুত পুলিশ এবং দমকল বাহিনীকে খবর দেয়। হ্যান্ড মাইকে মেয়র মীমকে পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আত্মহত্যা করতে নিভৃত করেন কিন্তু মীম কিছুই শুনছিল না।
এদিকে, আল মীমের মোবাইল টাওয়ারে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় করে। পুলিশ প্রশাসনকে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হিমসীম খেতে হয়। মীমের মোবাইল টাওয়ারে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টার দৃশ্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দৃশ্য দেখে লক্ষাধীক মানুষের মধ্যে উৎকন্ঠা বেড়ে যায় এবং মীমের স্বজনদের আহাজারীতে টাওয়ার এলাকা ভারী হয়ে উঠে। আমতলী ও পটুয়াখালী দমকল বাহিনীর শ্বাসরুদ্ধকর সাড়ে তিন ঘন্টা প্রচেষ্টার পর রাত সাড়ে সাতটায় মীমকে টাওয়ার থেকে নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। মীমকে উদ্ধার করে দমকল বাহিনীর লোকজন আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মীম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আমতলী পৌরসভার গাড়ী চালক মোঃ মনির হোসেন বলেন, বাসা থেকে ফেরার পথে মীমকে মোবাইল টাওয়ারে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে দেখে পৌর মেয়রকে খবর দেই। তিনি এসে মীমকে উদ্ধারের সকল চেষ্টা করেছেন।
আব্দুল্লাহ আল মীমের বাবা বাহাদুর জোমাদ্দার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মীম তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবে বলে ওর মাকে জানায়। ওর মা এতে রাজি না হওয়ার বাসায় ভাংচুর এবং আমাকে লাঞ্ছিত করেছে। পরে মোবাইল টাওয়ারে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
আমতলী ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত ষ্টেশন ম্যানেজার মোঃ শাহাদৎ হোসেন বলেন, প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা শ্বাসরুদ্ধকর প্রচেষ্টার পরে আবদুল্লাহ আল মীমকে উদ্ধার করেছি। তিনি আরো বলেন, মীম টাওয়ারের উপরে উঠে হতবম্ভ হয়ে যায়।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মোঃ ইমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, মীমের যথাযথ চিকিৎসা চলছে। মীম আশঙ্কামুক্ত।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, আবদুল্লাহ আল মীম মোবাইল টাওয়ারে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে যাই। পরে পুলিশ এবং দমকল বাহিনীর লোকজনকে খবর দেই। বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে মাইকের মাধ্যমে মীমকে আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকতে নিভৃত করি। আল্লাহর অশেষ রহমতে পুলিশ এবং দমকল বাহিনীর কর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম বলেন, সোমবার দুপুরে মীমের বাবা মুঠোফোনে জানান, তার ছেলে মীম ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করছে। পরে খবর পেয়েছি ওই ছেলে মোবাইল টাওয়ারের উঠে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। তিনি আরো বলেন, ওই ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এইচএকে/এনবি