বাউফলের কালাইয়া চেনা হাটের অচেনা রূপ

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » বাউফলের কালাইয়া চেনা হাটের অচেনা রূপ
সোমবার ● ৩০ মার্চ ২০২০


বাউফলের কালাইয়া চেনা হাটের অচেনা রুপ

বাউফল (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম হাট বলে খ্যাত বাউফলের কালাইয়া বন্দর। ধান-চাউল, গরু-মহিষ, সুপারি, মাছ,মুদি-মনোহারি এবং ভূষামাল ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রসিদ্ধ এই বাজার। সপ্তাহের প্রতি সোমবার এখানে হাট বসে। সোমবারের হাটকে কেদ্র করে রোববার থেকেই বাজারটি কোলহলময় হয়ে উঠে।  সরকার এই বাজারটি থেকে প্রতিবছর কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব পেয়ে থাকেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে এই প্রথম করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রশাসনের মাইকিংসহ নানা ধরণের প্রচার প্রচারণার ফলে জনশূণ্য এখন কালাইয়া বাজার। এযেন চেনা হাটের আচেনা রুপ।
স্থানীয়দের থেকে জানা গেছে, পাইকারি এবং খুচরা বেচা কেনার জন্য আসপাশের এলাকা ছাড়াও নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, পাবনা, যশোর, খুলনা, বরিশাল এবং ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মহাজনরা গরু-মহিষ, ধান-চাউল এবং ভূষা মাল ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য এই হাটে আসেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর এই প্রথম ঐতিহ্যবাহি এই হাটটি জনশূণ্য দেখা গেল। আসপাশের কিছু লোকজনের সমাগম দেখা গেলেও আসেনি অন্য জেলার ক্রেতা-বিক্রেতা। মুদি-মনোহারি পট্টির মহাজনরা জানান, তাদের কোন পাইকার আসেনি। বেচা-কেনা নেই। কাঁচাবাজার. মাছ-তরকারি এবং ওষুধের কয়েকটি দোকান ছাড়া সবই বন্ধ। রাতে মনে হয় ভূতুরে বাজার। ইতিপূর্বে বড় বড় হরতালের সময়ও কালাইয়া বাজার এমন জনশূণ্য দেখা যায়নি। কিন্তু করোনায় পেড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, জুয়েলারী, কাপড়, গার্মেন্টস, কসমেটিক্স, হার্ডওয়ার, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, ভূষা মালের আরত, সেলুনসহ সব ধরণের দোকানই বন্ধ। বন্ধ রয়েছে সকর ধরণের যানবাহন। নৌ পথেরও সকল ধরণের যোগাযোগ বন্ধ। বিশাল গরু-মহিষের হাট খাঁ খাঁ করছে। ধান হাটায় নেই কোন কলোরব। লঞ্চঘাটে এখন আর শোনা যাচ্ছে না লঞ্চের হুইসেল। মাঝে মধ্যে পুলিশ, প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। এযেন এক অঘোষিত যুদ্ধ। মানুষ করোনা সম্পর্কে অতটা ওয়াকিবহাল না হলেও এক ধরণের ভাইরাসে মানুষ মেরে ফেলছে এমন ভীতিই সকলকে গৃহবন্দী করে ফেলেছে। কিছু সংবাদকর্মী এবং উৎসাহী দু’চার জন লোক ছাড়া কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, অঘোষিত লকডাউনের সুযোগে মাদক ব্যাবসায়িরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেদারছে চলছে মাদক বেচাকেনা। দশ দিনের ছুটিতে সারা দেশ থেকে আসা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের সময় কাটছে এখন মাদক নিয়ে। কোন কোন পাড়া-মহল্লার খালি ঘরে চলছে জুয়ার আসর। কালাইয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস.এম.ফয়সাল আহমেদ মনির হোসেন মোল্লা জানান, “শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের সময়ও কালাইয়া বাজার মিলেছে। কিন্তু করোনা এতটাই শক্তিশালী হয়ে দেখা দিয়েছে, যার ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না-হাটও মিলছে না”। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে আরো দশদিন এরকম ঘরে থাকতে হবে। সকলকে এই বিধিবিধান মেনে চলার অনুরোধ করছি।
এমনই অবস্থা নিয়ে বয়োজেষ্ঠ্যরা বলছেন, যানবাহন, কলকারখানা,যানবাহ বন্ধ এবং মানুষের আনাগোনা কম থাকায় পরিবেশ অনেক ভাল হয়েছে। এ কয়েকদিনেই অনেক হারিয়ে যাওয়া পাখির দেখা মিলছে। আকাশ পরিস্কার। নদীর পানি পরিস্কার। নির্মল বাতাস। গাছ-গাছালিতে নতুন পাতার সমারহো, ফুলে ফুলে ভরে উঠছে গাছপালা। পাখির ডাক, এযেন এক নতুন জগতের বার্তা দেয়া হচ্ছে। এরপরেও করোনা ভাইরাস থেকে রেহাই পেতে সরকারি বিধি মেনা চলা উচিৎ। আমরা ভাল থাকলে দেশ ভাল থাকবে, দেশ ভাল থাকলে বিশ্ব ভাল থাকবে।

এপি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩১:৫৬ ● ৩৭৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ