এ.এম মিজানুর রহমান বুলেট॥
কলাপাড়ায় বন কর্মকর্তাদের যোগসাজোশে গোলপাতার বন উজাড় করে ধ্বংস করা হচ্ছে। গোলপাতার এ বন কেটে সরকারী সম্পত্তি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ উপরে ফেলে প্রকাশ্যে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে করা হচ্ছে ঘের, পুকুর এবং বাড়ি নির্মাণ। আর এসব দখল করে দিতে রয়েছে একাধিক মামলার আসামীদের একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী চক্র। যাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না এলাকার সাধারণ মানুষ। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার ওপর নেমে আসে মাদকাসক্তদের দ্বারা নির্যাতনের খড়গ। দীর্ঘ বছর ধরে স্থানীয় এ সন্ত্রাসী চক্রটি সরকারী সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসাসহ একাধিক অসাজিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থেকেও ক্ষমতাসীন দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে সহজেই রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বালিয়াতলী ইউপির চরনজির এলাকার গোলপাতার বন উজাড় করে কয়েক’শ একর সরকারী সম্পত্তি দখল করে ঘর, বাড়ি, পুকুর এবং মাছের ঘের নির্মানের দৃশ্য। আর এসব জমির অনেকাংশ রেকর্ডীয় মালিক দাবী করে শতাশং ৫০হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী হাজী মো: রুহুলআমিন- এমন দাবী জমি ক্রেতাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্র জানা যায়, বর্তমানে লালুয়া ইউপির ভুমি অধিগ্রহনে গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোকে মূল টার্গেট করে তাদের বালীয়তলীতে সরকারী সম্পত্তিতে বসতবাড়ির জায়গা দখল করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ ভুমিদস্যু চক্রটি। আর এতে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন এবং জন প্রতি মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বালীয়াতলী জোনের বনবিভাগ শাখার নৌ-চালক মাহামুদসহ আরো অনেক কর্তাব্যক্তিরা।
স্থানীয় বাসীন্দাদের অভিযোগ, আন্ধারমানিক নদীতীরবর্তী চরনজির এলাকায় সরকারী জমিসহ রেকর্ডীয় জমি ক্রয় করেন লালুয়া ইউনিয়নের সজু ফকির, কামাল তালুকদার, আনিচ হাওলাদার এবং ইউনুচ মুন্সি। আর এসব জমি ভরাট করতে চুক্তির মাধ্যমে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে দখল করে দিচ্ছেন স্থানীয় ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ’র সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান মৃধা, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ’র সাংগঠনিক সম্পাদক বাচ্চু শিকদার, সাবেক ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি জাকির সরদার ও চিহ্নিত মাদকসেবী হাকিম।
এসকল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ক্রয়কৃত জমির মালিক কামাল তালুকদার মুঠোফোনে জানান, আমি যখন জমি কিনেছি তখন হাজী মো: রুহুল আমিন আমাকে গোলবনসহ বুঝিয়ে দিয়েছে। আর সলেমান ভেকু দিয়ে মাটি কেটে দখল করে দিয়েছে। তাদের অভিযোগ বন কর্তাদের চোখের সামনেই বনায়ন ধ্বংস করে এমন দখলকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বনকর্তাদের এমন দুর্নীতির চিত্র দেখে সংশ্লিষ্ট পানিউন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তারাও অবাক হন। তারা বলেন, দখলদারদের সাথে বনকর্মকর্তাদের কতটা সখ্যতা হলে এসব অবৈধ কর্মকান্ড হতে পারে!
কলাপাড়া পানিউন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো.ওয়ালিউজ্জামান বলেন, স্বাভাবিক ভাবেই বন উজাড় করে কেউ জমি দখল করলে বনবিভাগ কতৃপক্ষকে জানানোর কথা। অথচ সংশিষ্ট বিট কর্মকর্তাসহ তাদের ডাকা হলেও ওই বিভাগের কোনো সদস্য ফোন পর্যন্ত রিছিভ করছেন না। তিনি আরো জানান, এসকল অবৈধ কর্মকান্ডের ব্যাপারে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বন ধ্বংস রুখতে প্রশাসনিক চেষ্টা অব্যহত আছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন বিভাগ পটুয়খালী) আমনিুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। তবে এখন খতিয়ে দেখা হবে এবং দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।