গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরিশালের গৌরনদীতে হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামিকে ভ্রাম্যমান আদালতে অর্থদন্ড দিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিগত ১৫মার্চ রাতে উপজেলার পূর্ব ডুমুরিয়া গ্রামে জুয়ার আসার থেকে বেল্লাল ফকির নামে ওই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। বেল্লাল ওই এলাকায় ২০১৮ সালে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর কবির ফকির হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ঘটনাটি জেনেও রহস্যজনক কারণে চেপে গেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ রাতে গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ডুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন জুয়ার আসার থেকে জুয়াড়ি বেল্লাল ফকির ও অপর জুয়াড়ি মাসুদ বেপারীকে আটক করে থানা পুলিশ। এর মধ্যে বেল্লাল ফকির গৌরনদী থানায় দায়েরকৃত ৩২/২৯-১১-২০১৮ নং ও জিআর নং ৩৬৭/১৮ মামলার আসামি।
ওই মামলায় বেল্লাল ফকির ও তার সহোদর ভাই আহম্মদ আলী ফকিরকে অভিযুক্ত করে ৩০ জানুয়ারি বরিশাল আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। গত ১১ মার্চ বেল্লালের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন। সুত্র জানায় ওই রাতেই বিষয়টি পুলিশকে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাদী শাহআলম ফকির অবহিত করেন। কিন্তু পরদিন ১৬ মার্চ ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গৌরনদীর ইউএনও ইসরাত জাহান জুয়াড়ি বেল্লাল ফকিরকে ১ হাজার টাকার অর্থদন্ড দিয়ে মুক্তির আদেশ দেন।
গৌরনদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান সাংবাদিকদের জানান, বাদীর স্বজনরা তার কাছে আসলে তিনি গৌরনদী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহাবুবুর রহমানকে তাৎক্ষনিক অবহিত করেন যে, বেল্লাল চার্জশীটভুক্ত হত্যা মামলার পলাতক আসামী। এ প্রসঙ্গে, গৌরনদী থানার ওসি গোলাম ছারোয়ার বলেন, আসামি বেল্লালের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট যখন পেয়েছি তার আগেই মোবাইল কোর্টে সাজা হয়েছে। আদালতের ওয়ারেন্ট থানায় পৌছাতে বিলম্ব হয়।
এ কারণে পুলিশ বেল্লালকে আটক করতে পারেনি। প্রয়োজনে আবার বেল্লালকে গ্রেফতার করা হবে বলে ওসি জানান। থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহাবুবুর রহমান বলেন, বেল্লাল চাজশীটভূক্ত হত্যা মামলার আসামি তা আমাকে কেউ অবহিত করেননি। আটককৃত যায় বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেহেতু হত্যা মামলাটি গৌরনদী থানায়। পুলিশ অবশ্যই জানতো যে বেল্লাল হত্যা মামলার আসামী।
চাইলে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করতে পারতো। তা না করে ভ্রাম্যমান আদালতে জুয়া খেলার অপরাধে এক হাজার টাকা জরিমানায় পার করে দেয়া হয়েছে হত্যা মামলার আসামীকে। এব্যপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, জুয়া খেলার অভিযোগে মোবাইল কোর্টে ২জনকে অর্থ দন্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে একজন যে হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী ছিল তা তার জানা ছিল না। আমার মনে হয় পুলিশ হয়তো ঘটনাটি চেপে গেছে। এ অবস্থায় ওই আসামী মোবাইল কোর্টে আসার সুযোগই নেই। গৌরনদী থানার ওসিকে বলে অভিযুক্ত বেল্লালকে ফের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হবে। উল্লেখ্য, জমিজমা নিয়ে গৌরনদী উপজেলার পুর্ব ডুমুরিয়া গ্রামের মালেক ফকিরের সঙ্গে সহোদর খালেক ফকিরের বিরোধ চলে আসছিল। ২০১৮ সালে ২৮ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে মালেক ফকিরের কন্যা বাড়ির বিরোধপূর্ণ জমির আম গাছের পাতা কুড়াতে গেলে খালেক ফকিরের ছেলে বেল্লাল ফকির(২৭) বাঁধা দেয় । এর জেরধরে ওইদিন দুপুর সোয়া ২টার দিকে বেল্লালের নেতৃত্বে ৩/৪ জনে লোহার রড় ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ছলেমান ফকির ও কবির ফকিরকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে । ৬দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে কবির ফকির মারা যায়।
এমএফ/এমআর