আমতলীতে কালভার্ট নির্মাণে অনিয়ম!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে কালভার্ট নির্মাণে অনিয়ম!
মঙ্গলবার ● ১০ মার্চ ২০২০


আমতলীতে কালভার্ট নির্মাণে অনিয়ম!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের ডালাচারা খালে গ্রামীণ অবকাঠামোর বক্স কালভার্ট নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মফিজুল ইসলামের যোগসাজসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিকদার এন্টারপ্রাইজের সাব ঠিকাদার মোঃ আব্দুল্লা আল মামুন এ অনিয়ম করেছেন বলে গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ  চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম মিয়া  এ অভিযোগ করেছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সাব ঠিকাদার নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে ও কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করছে না। এ বিষয়টি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানালেও তিনি কোন কর্নপাত করছেন না। তিনি উল্টো ঠিকাদারের পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানাগেছে, গত বছর জুলাই মাসে ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের অধীনে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের ডালাচারা খালে গ্রামীন অবকাঠামোর আওতায় ৩০ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩৬৪ টাকা ব্যয়ে বক্স কালভার্টের দরপত্র আহবান করে। ওই কাজ পায় মেসার্স সিকদার এন্টার প্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমতলীর আবদুল্লাহ আল মামুন সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ নেয়। ৬০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলে গত বছর ৯ অক্টোবর কাজের মেয়াদ শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদার কাজ না করে ফেলে রাখেন। পরে গত বছর ৬ মাসের জন্য কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এ বছর মার্চ মাসের শুরুতে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কার্যাদেশ  অনুসারে বক্স কালভার্টটির বেইজ ৩৬ ফুট দৈঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থ এবং বেইজ ঢালাই ১২ ফুট দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কার্যাদেশ অনুসারে কাজ করছে না। ওই কার্যাদেশে বেইজ ঢালাইয়ের পূর্বে আট ইঞ্চি বালু, ৩ ইঞ্চি ইটের সলিং  ও ৩ ইঞ্চি খোয়ার সলিং দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু ঠিকাদার আব্দুল্লাহ আল মামুন কার্যাদেশ অনুসারে কাজ করছেন না। ছয় ইঞ্চি বালুর স্থালে দেয়া হয়েছে ৩ ইঞ্চি, ৩ ইঞ্চি খোয়ার সলিংয়ের স্থলে দেয়া হয়েছে  দেড় ইঞ্চি।  বেইজ ঢালাইয়ে ১২ ইঞ্চি দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে মাত্র ৮ ইঞ্চি এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে বক্স কালভার্টে গ্রেড ওয়াল ও এঙ্গেল দেয়ার কথা থাকলেও সাব ঠিকাদার আব্দুল্লাহ আল মামুন তা না করেই কালভার্ট নির্মাণ কাজ করছেন। ঠিকাদারের বক্স কালভার্ট নির্মাণের অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সোমবার বিকেলে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মনিরা পারভীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ঠিকাদার আব্দুল্লাহ আল মামুন ঠিকমত বেইজ নির্মাণ করছে না।  নি¤œমানের রড ও পাথরের খোয়া দিয়ে কাজ করছে। ছয় ইঞ্চি বালুর স্থলে দেয়া হয়েছে ৩ ইঞ্চি, ৩ ইঞ্চি খোয়ার সলিংয়ের স্থলে দেয়া হয়েছে দের ইঞ্চি। বেইজ ঢালাইয়ে ১২ ইঞ্চি দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে মাত্র ৮ ইঞ্চি। কার্যাদেশে বক্স কালভার্টে গ্রেড ওয়াল ও এঙ্গেল দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা না করেই কালভার্টের নির্মাণ কাজ করছেন।
গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এ্যাড. নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সাব ঠিকদার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলামের যোগসাজসে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে এবং কার্যাদেশ অনুসারে কাজ করছে না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানালেও তিনি কোন কর্নপাত করছেন না। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাই।
মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখাগেছে, ঠিকাদারের লোকজন কাজ করছে। বেইজ ঢালাইয়ে ১২ ইঞ্চি দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে মাত্র ৮ ইঞ্চি।
স্থানীয় কারী মোহাতার হোসেন ও নির্মল চন্দ্র মন্ডল বলেন, নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কালভার্টের নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারের লোকজন। ঠিকমত বালু, ইটের সলিং ও খোয়ার সলিং দেয়নি। তারা আরো বলেন, ১২ ইঞ্চি বেইজ ঢালাইয়ের স্থলে দিয়েছেন মাত্র ৮ ইঞ্চি।
সাব ঠিকাদার আব্দুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি কার্যাদেশ অনুসারে কাজ করছি।
আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মফিজুল ইসলাম ঠিকাদারের পক্ষ অবলম্বন করে বলেন, কার্যাদেশ অনুসারে ওই কালভার্টের কাজ হচ্ছে। ওই কাজের তদারকি আমি করছি। কোন সমস্যা নেই।
বরগুনা জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, বক্স কালভার্টের অনিয়মের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারের কাজের অনিয়ম দেখে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, ঠিকমত কাজ না করলে ওই কাজের বিল দেয়া হবে না।

এমএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:১৪:২৪ ● ৩৫৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ