এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন থেকে॥
দ্বীপ ভোলার বিস্তৃর্ণ জলরাশি, বালুকাময় সৈকত, যতদুর দৃষ্টি যায় শুধু সবুজ আর সবুজ, তারই সাথে হাতছানি দিতে থাকে টুকরো টুকরো নিবিড় বনভূমি, এছাড়া ও পাখির কল কাকলি এবং হরিণসহ বিভিন্ন বিরল প্রাণীর এক সাথে দেখা মিলবে চরফ্যাসনের, চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর ও মনপুরাতে। চরগুলোতে যাতায়ত, থাকা, এমনকি সুপিয় পানির পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা নেই, তাই নিজ উদ্যেগেই এ সমস্ত ব্যাবস্থা করে এখানে আসতে হয়। তার পরেও প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য দেখতে কষ্ট ও বিড়ম্বনা সহ্য করে বহু পর্যটক এসে ভীড় জমিয়েছেন চরফ্যাশন এ সমস্ত চরফ্যাশনের দক্ষিণে এলাকায় প্রতিদিনই ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে। বিকেলে এখানে অনেকেই দল বেঁধে, পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসছেন। তুলাতলীতে নদীর উত্তাল ঢেউ, নির্মল বাতাস আর বাহারি নৈসর্গিক প্রকৃতি, আগতদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়। দর্শনার্থীরা এখানে এসে নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ানো, নদীতে নৌকাভ্রমণ, বাঁধের ওপর সিসি বল্লকের ওপরে দাঁড়িয়ে নদীর বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ পান। স্থানীয়দের উদ্যোগে এখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে।
এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী সাবিনা ইয়াসমিন শিরিন বলেন, কুকরি মুকরির কথা অনেক শুনেছি। এবার বেড়াতে এলাম। এসে দেখলাম, সত্যি খুব সুন্দর মনোরম প্রাকৃতি রয়েছে এখানে। যে কেউ এলে তার ভালো লাগবে। তবে এখানে দর্শনার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বসার স্থান নেই। কর্তৃপক্ষের এ দিকগুলোতে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
চরফ্যাসন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭০কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের উপকন্ঠে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর মোহনায় গড়ে উঠা চর কুকরি-মুকরিতেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বন্যপ্রাণীর অভায়ারন্য। মাইলের পর মাইল বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যানভাস স্বপ্নের দ্বীপ কুকরি-মুকরিকে সাজিয়েছে সাজের সমারোহে। চিত্রা হরিন, বানর, উদবিড়াল, শিয়াল, বন্য মহিষ-গরু ,বন বিড়াল, ইত্যাদি, আর পাখি ও সরিসৃপ হিসাবে বিভিন্ন প্রজাতির বক, বন মোড়গ, শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ুর , কোয়েল, গুইসাপ, বেজি, কচ্ছপ ইত্যাদি প্রাণী চর কুকরি-মুকরির বনে দেখা যায়। কুকরি-মুকরির প্রধান আকর্ষণ সাগর পাড়, এখানে উত্তাল ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখলেই মনে পড়ে যাবে কক্সবাজার কিংবা সমুদ্র সৈকতের কথা, এছাড়া ও এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত ও সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমন পিপাসুদের মুগ্ধ করবে।
ইতোমধ্যেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, ক্যাম্পিং করার জন্য প্রশন্ত বিচ আর নিরব শান্ত পরিবেশের জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। পাশেই আছে মনপুরা। ঘন বন, লোকালয়ের কোলাহল থেকে দূরে, নানা বণ্যপ্রাণির অবাধ বিচরণের মাঝে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য পেতে প্রায়ই এখনে ভ্রমণ করেন অসংখ্য মানুষ। চর কুকরি-মুকরিতে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক ডিজাইনার তানজির রনি বলেন, এই জায়গাটা খুবই সুন্দর, প্রশন্ত বিচ, পশু পাখি, বানর এসব দেখতে খুব ভালো লাগছে, তবে, এখানে আসা যাওয়ার রান্তা খুবই খারাপ, একটি ভালো লঞ্চের ব্যাবস্থা থাকলে পর্যটকদের এখানে আসার আগ্রহ ও বিভিন্ন এলাকার সাথে যোগাযোগ বেড়ে যেতো।
চরফ্যাসনে সর্বদক্ষিণের দ্বীপের নাম ঢালচর। এটি চরফ্যাসন উপজেলার অর্ন্তগত একটি ইউনিয়ন। দেশের বৃহত্তম দুটি সমুদ্র সৈকতের পরে ঢালচর দ্বীপের তারুয়া এলাকাটি তৃতীয় সমুদ্র সৈকত হিসেবে স্থান পেতে পারে বলে জানিয়েছেন ভ্রমণকারীরা।
প্রকৃতি প্রেমি ও পর্যটক মোঃ শিহাব উদ্দিন বলেন, তারুয়ার পুরো দ্বীপটি দেখার স্বাদ যেন অপূর্ণ-ই রয়ে যায় কারো কারো। যে প্রান্তেই চোখ যায় সেদিকেই যেন প্রাকৃতিক সৌন্দয্যে নয়নাভিরাম দৃশ্য। দ্বীপজেলায় চরফ্যাশনে এমন প্রকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি রয়েছে তা স্ব-চক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবেনা।
চরকুকরি মুকরির চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, শুক্র ও শনিবার আবার ছুটির বিশেষ দিন গুলোতে পর্যটকদের আড্ডায় জমে উঠে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকগন এসে আনন্দ উপভোগ করে থাকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, আমাদের চরফ্যাশন এলাকার চরগুলোযে এত সুন্দর তা আমি জানতামনা। আজ এলাকায় গিয়ে এত সুন্দর পর্যটক এলাকা একটু যতœবান হলে বা উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি একটু নজর দিলেই প্রতিটি চরাঞ্চল এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসাব ঘোষণা দেয়া সম্ভাবন।
ভোলা জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, এই সমস্ত চরের পরিবেশগুলোকে আরো ভালো ও উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে পর্যটকরা এসে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে প্রাকৃতিক পরিবেশগুলো উপভোগ করতে পারে।