আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আমতলী উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রারের দূর্নীতি, ঘুষ বানিজ্য, কর্মচারীদের ঘর তোলার নামে টাকা আত্মসাৎ ও অসাধাচারনের অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবীতে আমতলী উপজেলা দলিল লেখক সমিতি অনিদৃষ্টকালের কর্ম-বিরতি পালন করছে।
সোমবার থেকে কর্ম-বিরতি শুরু করে বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পরেছে আমতলী ও তালতলী উপজেলার দলিল রেজিষ্ট্রি করতে আসা হাজার হাজার মানুষ। দ্রুত তার বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন দলিল লেখকরা।
জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর মোঃ মাসুম মিয়া আমতলী উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই দলিল লেখক ও কর্মচারীদের সাথে অসাধাচরণ, ঘুষ বানিজ্য, দূর্ণীতি, দলিল রেজিষ্ট্রিতে লাখে এক হাজার টাকা হারে ঘুষ নেয়া শুরু করেন এমন অভিযোগ দলিল লেখকদের। ওই সময় থেকেই দলিল লেখকদের সাথে তার মতবিরোধ চলে আসছে। সাব-রেজিষ্টারের এমন অনিয়মের প্রতিবাদে দলিল লেখকরা গত দুই বছর দুই মাসে কয়েক দফা কর্ম-বিরতি পালন করছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সাব রেজিষ্টারের এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার দাবীতে গত সোমবার থেকে আমতলী দলিল লেখকরা কর্ম-বিরতি শুরু করছে। গত তিনদিন ধরে এ কর্ম-বিরতি অব্যাহত রয়েছে। কর্ম-বিরতি পালন করায় আমতলী-তালতলী উপজেলার হাজার হাজার মানুষ দলিল রেজিষ্ট্রিতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। দলিল লেখকরা অভিযোগ করে বলেন, সাব রেজিষ্ট্রার মোঃ মাসুম দলিল রেজিষ্ট্রি করতে প্রতি লাখেএক হাজার টাকা করে ঘুষ নেয়। ঘুষের টাকা না দিলে তিনি দলিল রেজিষ্ট্রি করেন না। তারা আরো বলেন সাব রেজিষ্টার মাসুম আমতলীতে যোগদান করেই কর্মচারীদের জন্য একটি ঘর তোলার নামে দলিল প্রতি দুই’শ ৫০ টাকা হারে গত দুই বছরে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা আদায় করেছেন। ওই টাকা দিয়ে ঘরমাত্র ঘর তুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এছাড়াও দলিল রেজিষ্ট্রি করতে গিয়ে সাব রেজিষ্টারের কাছে বিভিন্ন ধরনের হয়রানীর হতে হচ্ছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দলিল লেখক বলেন, লাখে এক হাজার টাকা ঘুষ, দূর্নীতি, অসাধাচারণ, ঘর তোলার নামে ১৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে সাব রেজিষ্টার। তার বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দেয়ার দাবীতে আমরা কর্ম-বিরতি পালন করছি।
আমতলী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ হারুন অর রশিদ খাঁন বলেন, সব রেজিষ্ট্রার মোঃ মাসুম আমতলীতে আসার পর থেকেই সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসকে দূর্নীতির মহা-আখড়া হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আগে সই মহর উত্তোলনে চাঁদা ছিল এক হাজার টাকা। সে আসার পর থেকেই সই মহরে তুলতে এক হাজার টাকা স্থলে দের হাজার টাকা আদায় করছে। তিনি আরো বলেন, শতকরা ১ টাকা হারে লাখে তাকে এক হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। টাকা না দিলে দলিল রেজিষ্ট্রি করেন না। গত দুই বছর দুই মাসে কর্মচারীদের জন্য ঘর তোলার নামে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা আদায় করেছেন। ওই টাকা দিয়ে নামমাত্র একটি ঘর তুলে নিজেই সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সাব- রেজিষ্টার দলিল লেখকদের সাথে অসাধাচারন করছে। কোন দলিল লেখকেরই মান-সম্মান রক্ষা হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, যতদিন পর্যন্ত সাব-রেজিষ্ট্রারকে আমতলী থেকে অপসারণ করা না হবে ততদিন পর্যন্ত দলিল লেখকদের কর্ম-বিরতি অব্যাহত থাকবে।
আমতলী সাব-রেজিষ্টার মোঃ মাসুম মিয়া তার বিরুদ্ধে দলিল লেখকদের আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধ ও সঠিক কাগজপত্র দিয়ে দলিল করার তাগিদ দিলে দলিল লেখকরা আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলিল লেখা বন্ধ করে দিয়ে কর্ম-বিরতি পালন করছে।
এমএইচকে/এমআর