আমতলীতে কালভার্ট নির্মাণ কাজে অনিয়ম!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে কালভার্ট নির্মাণ কাজে অনিয়ম!
বুধবার ● ৪ মার্চ ২০২০


আমতলীতে কালভার্ট নির্মাণ কাজে অনিয়ম!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মফিজুল ইসলামের যোগসাজসে ঠিকাদার শফিকুজ্জামান নিজাম আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী খালের বক্স কালভার্ট নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান একেএম নুরুল হক তালুকদার এ অভিযোগ করেন। ইউপি চেয়ারম্যান একেএম নুরুল হক তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করছে না। এ বিষয়টি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানালেও তিনি কোন কর্নপাত করছেন না। তিনি উল্টো ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাইছেন।
আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানাগেছে, গত বছর জুলাই মাসে ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় গ্রামীন অবকাঠামোর আওতায় আমতলী উপজেলা আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী খালে ৩২ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা ব্যয়ে বক্স কালভার্টের দরপত্র আহবান করে। ওই কাজ পায় কলাপাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোঃ শফিকুজ্জামান নিজাম এন্টার প্রাইজ। প্রাক্কলনে বক্স কালভার্টটি ৩৬ ফুট দৈঘ্য, ১৮ ফুট উচ্চতা ও ১৪ ফুট প্রস্থের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন অনুসারে কাজ করছে না।  দৈঘ্য ও প্রস্থ ঠিক রাখলেও মাটির নিতে কম  গভীরতা দিয়ে কালভার্ট নির্মাণ করছেন। কালভার্টের খাড়া বেইজে ১৬ মিলিমিটার, বাইডারে ১২ মিলিমিটার ও উইং ওয়ালে ১০ মিলিমিটার রড দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খাড়া বেইজে ১২ মিলিমিটার, বাইডারে ৮ মিলিমিটার ও উইং ওয়ালে ৬ মিলিমিটার রড় দিয়ে কাজ করছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাটির নিচে ঠিকমত বেইজ নির্মাণ না করেই বক্স কালভার্ট নির্মাণ কাজ করছে।  নি¤œমানের রড ও পাথরের খোয়া দিয়ে কাজ করছে। এক কড়াই সিমেন্টের বিপরীতে দুই কড়াই বালু ও চার কড়াই খোয়া দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক কড়াই সিমেন্টের বিপরীতে ৮ কড়াই বালু ও ৮ কড়াই  খোয়া মিলিয়ে ঢালাই দিয়েছে। এছাড়া বক্স কালভার্টে গ্রেড ওয়াল ও এঙ্গেল দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা না করেই কালভার্টের নির্মাণ কাজ করছে। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, ঠিকাদারের নি¤œমানের কাজের কথা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে কিন্তু তিনি এতে কোন কর্মপাত করছে না। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে গত দুই মাসে এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দেখিনি। তারা আরো বলেন, কাজের অনিয়মের কথা ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। তিনি কয়েকবার এসে কাজের অনিয়মের বিষয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। ৬০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলে গত বছর ৯ অক্টোবর কাজের মেয়াদ শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদার কাজ না করে ফেলে রাখেন। গত বছর ৬ মাসের জন্য কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এ বছর জানুয়ারী মাসে কাজ শুরু করেন।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান একেএম নুরুল হক তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, ঠিকদার শফিকুজ্জামান নিজাম ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলামের যোগসাজসে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে এবং প্রাক্কলন অনুসারে কাজ করছে না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার জানালেও তিনি কোন কর্নপাত করছেন না। তিনি আরো বলেন, গোমর ফাঁস হওয়ার ভয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কোন কাগজপত্র দেখাচ্ছেন না। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধতন কর্তপক্ষের কাছে দাবী জানাই।
বুধবার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে সাংবাদিক ও ইউপি চেয়ারম্যান একেএম নুরুল হক তালুকদারকে দেখেই কাজ ফেলে রেখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন পালিয়ে  গেছে।
স্থানীয় জালাল চৌকিদার ও আবদুল জব্বার ঘরামী বলেন, নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কালভার্টের নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারের লোকজন। এর প্রতিবাদ করলে তারা উল্টো আমাদের উপরে ক্ষেপে যান। তারা আরো বলেন, এক কড়াই সিমেন্টের মধ্যে আট কড়াই বালু ও আট কড়াই পাথরের খোয়া দিয়ে ঢালাই দিচ্ছে। এ বিষয়টি আমরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি কিন্তু তিনি কোন কর্নপাত করছেন না। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানাই।
ঠিকাদার মোঃ শফিকুজ্জামান নিজামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মফিজুল ইসলাম ঠিকাদারের পক্ষ অবলম্বন করে বলেন, প্রাক্কলন অনুসারে ওই কালভার্টের কাজ হচ্ছে। ওই কাজের তদারকি আমি করছি। কোন সমস্যা নেই। উল্টো তিনি ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান ওই কাজে কোন সহযোগীতা করছেন না।
বরগুনা জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৩:৫৪ ● ৩২২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ