বানারীপাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বানারীপাড়ায় দীর্ঘ দিন পর হাই কোর্টের নির্দেশে ২২৫ বছরের পরাতন ও এলাকার ঐতিয্যবাহী সূর্য মনি মেলা আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে। এ বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বলেন, মহামান্য হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে সূর্য মনি মেলা অনুষ্ঠানে আমাদের পক্ষ থেকে আর কোন বাধা নেই। তবে সূর্য মনি মেলা অনুষ্ঠানে হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার পাশাপাশি সর্বাত্মক সহযোগীতা প্রদান করবেন বলে জানান।
অপরদিকে সুর্য মনি মেলা অনুষ্ঠানে বিলম্ব হওয়ার কারণে দোকানী ও আয়োজকরা আর্থিক ভাবে লাখ লাখ টাকা ক্ষতি গ্রস্থ্য হয়েছেন। জানা গেছে, উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের বেতাল গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর মাঘ মাসের মাঘি সপ্তমী তিথিতে সূর্য দেবের পূজা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মাস ব্যাপী ২২৫ বছরের পরাতন ও এলাকার ঐতিয্যবাহী সূর্য মনি মেলা শুরু হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী এবারেও সার্কস, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, যাত্রা ও হস্ত শিল্প সহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে দোকানীরা এ মেলায় এসে দোকানে পসরা সাজিয়ে বসেন।
এবারে সূর্য মনি মেলা অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময় এস.এস.সি পরীক্ষা হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রথমে ওই মেলা অনুষ্ঠানের অনুমতি দেননি। পরে মেলা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বেতাল গ্রামের পুরুহিত গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য ও সেফালী নামের এক নারী সম্প্রতি সূর্য মনি মেলা অনুষ্ঠানের জন্য এক মাসের অনুমতি চেয়ে মহামান্য হাই কোর্টে ২২৭৭/ ২০২০ নং- রিট পিটিশন করেন। তাদের এ রিট পিটিশনের পর ১৯ ফেব্রুয়ারী হাই কোটের বিচারপতি এম.এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি এমডি মোস্তাফিজুর রহমান এর বেঞ্চ ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৫ দিনের জন্য বানারীপাড়ার বেতাল গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী সূর্য পূজা ও সূর্য মনি মেলা, সার্কাস, পুতুল নাচ, র্যাফেল ড্র, যাত্রা ও পালা গান অনুষ্ঠানের অনুমতি দেন। একই সাথে ওই বেঞ্চ এ মেলা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সূর্য পূজার মধ্য দিয়ে উপজেলার বেতাল গ্রামে আনুষ্ঠানিক ভাবে সূর্য মনি মেলা শুরু হয়েছে। এদিন সকালে বেতাল গ্রামের পুরুহিত গোপাল চন্দ্র ভট্টাচাজ্য সূর্য দেবের পূজা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ মেলার উদ্ধোধন করেণ।
এদিকে মঙ্গলবার সূর্য মনি মেলা অনুষ্ঠানের অনুমতি বিলম্বে পাওয়ার কারণে দোকানীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ্য হয়েছেন বলে দাবী করেছেন। এ ব্যাপারে উজিরপুর উপজেলার মাহিলারা থেকে আসা বাঁশ-বেতের হস্ত শিল্পের দোকানী দিপংকর জানিয়েছেন, সূর্য মনি মেলায় এসে প্রায় এক মাস ধরে অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় থেকে জমার টাকা খরচ করে আসছিলাম। এখন অনুমতি পাওয়ার পর একটু লাভের মূখ দেখার আসা করছি বলে দিপংকর জানান। একই ভাবে দি রয়েল ব্যাংঙ্গল লক্ষণ দাস সার্কাস’র মালিক অরুণ দাস ও টুঙ্গিপাড়ারার পাটগাতি থেকে আসা মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সত্যাধীকারী রাম সাহা এবং গাজিপুর থেকে আসা নাগর দোলার সত্যাধীকারী মাসুদ হওলাদার জানান, ২১ দিন ধরে সূর্য মনি মেলা অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় ছিলাম। বাড়ি থেকে টাকা এনে এখানে বসে খরচ করে আসছিলাম। মহামান্য হাই কোর্ট থেকে সুর্য মনি মেলা অনুষ্ঠানের অনুমতি পাওয়ার পর লোকসান কাটিয়ে তারা আথিক ভাবে লাভবান হওয়ার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছেন। মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি বাদল কৃষ্ণ সাহা জানান, এস.এস.সি পরীক্ষার জন্য এবারে সূর্য মনি মেলা একটু বিলম্বে শুরু হলেও আমরা দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা যোরদার করার পাশাপাশি তাদের প্রয়োজনীয় তৈযষ পত্র সহ বিনোদনের জন্য সার্কাস, যাত্রা, পালা গান এবং শিশুদের জন্য নাগর দোলা, পুতুল নাচ ও হরেক রকম খেলনার পসরা সাজিয়েছে।
জিএমআর/এমআর
