ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
গণভবনে চা-চক্রের আমন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা চিঠি দিয়ে জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন এ জোটের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রটোকল কর্মকর্তা-২ খোরশেদ আলমের হাতে ওই চিঠি পৌঁছে দেন। ফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, মিডিয়া উইংযের প্রধান জাহাঙ্গীল আলম প্রধান ও সমন্বয় কমিটির সদস্য আজমিরি বেগম ছিলেন ওই প্রতিনিধি দলে।
জোটের পক্ষে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই চিঠির শুরুতেই চা-চক্রের আমন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। এরপর লেখা হয়েছে, বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রের বিষয়টি অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে আলোচিত হয়েছে। কমিটি চা-চক্রের অনুষ্ঠান যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ফের সংলাপ নিয়ে আলোচনার মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ২ ফেব্রুয়ারি গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ২৬ জানুয়ারি আমন্ত্রণের ওই চিঠি পাওয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে আসা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে ওই আমন্ত্রণে সাড়া দেবে না, সে কথা বিএনপি নেতারা তখনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে জোটের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে ওই চা-চক্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে গঠিত সরকার কোনোভাবে নৈতিক নয়। সেদিন দেশের মানুষের অন্যতম অধিকার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ফ্রন্টের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এখনো জেলে আছে। নতুন নতুন মামলায় আরো অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহূত চা-চক্রে অংশগ্রহণ করা কেনো ক্রমে সম্ভব নয়।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির আহ্বানের প্রেক্ষাপটে এবার ভোটের আগে গত অক্টোবরে আকস্মিকভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন শেখ হাসিনা। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের তিন দফায় আলোচনার সুযোগ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী; তাতে বিভিন্ন আশ্বাস পাওয়ার কথা জানিয়ে ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির পর কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের দেওয়া আশ্বাসের কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিগত সপ্তাহেও এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের সঙ্গে যে সংলাপ হল, তখন তিনি যে কথাগুলো দিয়েছিলেন, একটাও রাখেননি। ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানের পর ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা কামাল হোসেন পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলে ফের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকতে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে দুই রকম বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছিল। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথমে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আবারও দলগুলোকে সংলাপে ডাকবেন। পরে তিনি কথা ঘুরিয়ে বলেন, সংলাপ আর হবে না, প্রধানমন্ত্রী নিমন্ত্রণ জানাবেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার একটি সংলাপ করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত ২৬ জানুয়ারি ঐক্যফ্রন্টকে পাঠানো চিঠিতে আমন্ত্রণের কথাই বলা হয়। তার আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিভেদ ভুলে ‘জাতীয় ঐক্যের’ ডাক দেন, বিএনপির নির্বাচিতদের সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানান। তার জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তখন বলেন, তারা যেহেতু ভোটের ফলই প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাই শপথ নেওয়া কিংবা সংসদে যোগ দেওয়ার ‘প্রশ্নই আসে না’।
এফএন/এমআর