মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
মানুষের চাহিদার চেয়ে উদ্ধৃত্ত ধান উৎপাদনের জনপদ সাগরপারের কলাপাড়ায় এ বছর জমি চাষের একসনা মূল্য কমে গেছে। একসনা, সাতবছর চুক্তিভিত্তিকসহ বিভিন্ন পন্থায় কৃষি জমি বন্দকীর দরে ধস নেমেছে। ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে ফলনের ব্যাপক ক্ষতিসহ ধানের দাম কম থাকায় এমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একারণে জমির মালিকসহ কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
এবছর একসনা, সাতবছরসহ বন্ধকী জমি কিনে চাষাবাদ করা প্রান্তিক, বর্গা থেকে শুরু করে সকল চাষীরা বিপাকে পড়েছেন। ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অনেকে পিছু টান দিয়েছে। কুয়াকাটার নবীনপুর গ্রামের কৃষক আলহাজ ইসমাইল খান জানান, তিনি নিজে ৮০ শতক জমি চাষাবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। আর ধান বিক্রি করেছেন মাত্র নয় হাজার টাকা। এ কৃষক জানালেন বাকি দুই কানি (১৬বিঘা) জমি ৪০ হাজার টাকা (কানি) দরে একসনা দিয়েছিলেন। কিন্তু ধানের দাম কম থাকায় এবছর কেউ চাষাবাদের জন্য একসনা কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিপাকে আছেন জমি নিয়ে। একদিকে ফসল ঘুর্ণিঝড় বুলবুলে নষ্ট হয়ে গেছে। অপর দিকে ধানের দাম ছিল মাত্র ৬৫০ টাকা মণ।
বালিয়াতলী ইউনিয়নের হাড়িপাড়া গ্রামের কৃষক কামাল মৃধা জানালেন, এ বছর ২০ বিঘা জমি চাষাবাদ করেছেন। ফলন পেয়েছেন কানি (৮বিঘা) জমিতে ৬০ মন। যা গেল বছর পেয়েছিলেন ৮০ মনের বেশি। গেল বছর একসনা আট বিঘা জমিতে পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। এ বছর ২০ হাজার টাকাও দিচ্ছেনা চাষীরা। ধানের রেট কম থাকা। ফলন কম পাওয়ায় এ বছর এভাবে জমির একসনা মূল্য কমে গেছে। এ কৃষকের দাবি আট বিঘা জমি চাষাবাদের খরচ আছে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা। একারণে জমি চাষে আগ্রহ নেই। এবছর অধিকাংশ চাষীর ধান চাষে লোকসান হয়েছে। তাই জমির একসনা মূল্যে অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। কৃষকরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
কৃষকের এমন সমস্যার থেকে উত্তরণে চাষাবাদে আগ্রহ সৃষ্টি করতে সরকারীভাবে ধান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত এক হাজার মেট্রিকটন ধান কেনার খবর নিশ্চিত করেছেন কলাপাড়ার খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুজ্জামান।
কলাপাড়ায় কেনার টার্গেট রয়েছে ২৯১০ মেট্রিকটন। একেকজন কৃষকের সর্বোচ্চ তিন টন ধান বিক্রির সুযোগ রয়েছে। উপজেলা ধান ক্রয় কমিটি লটারির মাধ্যমে কৃষক বাছাই করলেও এরই মধ্যে আদৌ কৃষক নয়, কিন্তু জমির মালিক অঢেল বিত্ত-বৈভব রয়েছে, রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি এরাও ধান বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা লুটে নিয়েছে। কেউ কেউ কৃষিকার্ড করে ব্যাংকে একাউন্ট করে মাঝখান দিয়ে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের মতো লভ্যাংশ হাতিয়ে নিয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অপেশাদারী প্রভাবশালীরা কৃষককে দেয়া সরকারের সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি বিভাগে ভূমির মালিক, প্রান্তিক ও বর্গচাষীর সঠিক কোন হিসাব নেই। তবে তাদের সেকেলের তথ্যে ৩৫ হাজার কৃষক পরিবারের একটি তথ্য বোর্ডে শোভা পাচ্ছে। প্রান্তিক ও বর্গাচাষীদের দাবি প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে ধান কেনা হোক। আর জমির মালিক কিন্তু চাষাবাদ করছেন না এমন অপেশাদারীদের চিহ্নিত করে কৃষিকার্ড বাতিল করার দাবি তাঁদের। অভিযোগ রয়েছে কৃষক নয় কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন পরিবারের সদস্যরা স্ত্রী-সন্তানসহ কৃষিকার্ড করে ওই কার্ডের নামের ধান খাদ্যগুদামে জমা দিয়ে লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
এমইউএম/এমআর