আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী-তালতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ড্রাম চিমনি অবৈধ ইটভাটি গড়ে উঠছে। এ সকল ইটভাটিতে দেদারসে পুড়ছে কাঠ। নিরব পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন। ইটভাটির মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তর লোকজনদের মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনকে টাকা দিলেই মিলে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর অনুমতি এ কথা জানান ইটভাটির শ্রমিকরা।
জানাগেছে, বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ও কৃষি অফিসের ছাড়পত্র ছাড়া ১০ টি ড্রাম চিমনি (ব্যারেল) ইটভাটি রয়েছে। এ সকল ইটভাটি স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ও ৫০-৬০ ফুট উচ্চতার অস্থায়ী চিমনি ইটভাটি স্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানী হিসেবে সকল ইটভাটিতে কাঠ পোড়ানোর জন্য গ্রাম, বাশবাড়িয়া চর ও ফারতার বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে স্তুপ করে রাখছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির আশঙ্কা করেছে পরিবেশবাদীরা।
আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, চাওড়া ও কুকুয়া ইউনিয়নের ১০ টি ড্রাম চিমনি ইটভাটি রয়েছে। ইটভাটিগুলো হলো উপজেলার রায়বালা গ্রামের বিবিসিকো, মহিষডাঙ্গা এলাকায় এমসিকে,চালিতাবুনিয়ার এইচএসবি, মধ্য চন্দ্রার (ইব্রাহিমপুর) এমএসবি, পাতাকাটার এইচআরডি। এ সকল অবৈধ ইটভাটিতে জেলা প্রশাসন, কৃষি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে এ ইটভাটির মালিকরা কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন অভিযান চালালেও তার লোক দেখানো মাত্র এমন কথা স্বীকার করেন নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ইটভাটির কয়েকজন শ্রমিক। উপজেলার এ সকল ইটভাটিগুলোর মধ্যে স্ব-মিল বসিয়ে গাছ চেরাই করে ইটভাটিতে পোড়াচ্ছে। এছাড়া চাওড়া ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর এমএসবি ব্রিকসের ২০০ মিটার দুরে রয়েছে ইব্রাহিমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাটার কালো ধোঁয়ায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঠিকমত ক্লাস করতে পারছে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, ইটভাটিগুলোর মধ্যে স্ব-মিল বসিয়ে কাঠ চেরাই করছে। ওই চেরাইকৃত কাঠ দিয়ে ইব্রাহিমপুর এমএসবি, পাতাকাটার এইচআরডি, কুকুয়া গ্রামের কৃষ্ণনগর গ্রামের এএমবি ও রায়বালা গ্রামের বিবিসিকো ব্রিকস’র কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন।
ইব্রাহিমপুর গ্রামের এমএসবি ব্রিকস’এর মালিক সেলিম হাওলাদার বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন জেনেও কিছু বলছে না।
কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে রায়বালা গ্রামের বিবিসিকো ব্রিকসের মালিক হান্নান মৃধা বলেন, কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে কোন অনুমতি লাগেনা। গত তিন বছর ধরে ছাড়পত্র ছাড়াইতো ইট পোড়ালাম। কেউতো কিছু করতে পারলো না।
এএমবি ব্রিকসের মালিক আবুল মৃধা পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক ও কৃষি অফিসের ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটি নির্মাণের কথা স্বীকার করে বলেন, জেলা প্রশাসন অফিস থেকে লোকজন এসে জরিমানা করে গেছেন।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, উপজেলার কোন ইটভাটিতে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। আমার ছাড়পত্র ছাড়াই ইটভাটি নির্মাণ করছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কর্যালয়ের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবদুল হালিম বলেন, আমতলীতে ৯টি এবং তালতলীতে ১টি ইটভাটির পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা লঙ্ঘন করে ওই ১০টি ইটভাটি নির্মাণ ও কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই সকল ইটভাটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, এ সকল অবৈধ ইটভাটিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর