আমতলীতে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের গাছ কেটে উজাড়!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের গাছ কেটে উজাড়!
রবিবার ● ২ ফেব্রুয়ারী ২০২০


আমতলীতে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের গাছ কেটে উজাড়!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া নদীর চরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ছৈলা, কেওড়া ও বাইন গাছ কেটে উজাড় করে দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন মাদবর ও তার সহযোগীরা।
শনিবার রাতে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ ওই বনাঞ্চলের  ছৈলা, কেওড়া ও বাইন গাছ জব্দ করেছে। যুবলীগ নেতার গাছ কেটে বন উজাড় করার ঘটনায় এলাকা সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু যুবলীগ নেতার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। এলাকাবাসী এ ঘটনায় যুবলীগ নেতার বিচার দাবী করেছেন।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০০ ফুট প্রস্থের  বাঁশবাড়িয়া নদী। শত বছরের এই নদীটি প্রাকৃতিকভাবে পলি জমে এখন মরা নদীতে পরিনত হয়েছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য ঠিক থাকলেও ভরাট হয়ে প্রস্থে ঠেকেছে মাত্র ৬০ ফুটে। ওই নদীর দুই পাশে পলি জমে চর জেগেছে। প্রাকৃতিক ভাবেই ওই চরে সৃষ্টি হয়েছে ম্যানগ্রোভ শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। গত ৪০ বছরে পলি জমে সৃষ্টি হওয়া চরে হাজার হাজার প্রকৃতিবান্ধব ছৈলা, কেওড়া ও বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের জন্ম হয়েছে। সৃষ্টির শুরুতে স্থানীয় কারো নজরে না আসলেও বর্তমানে ওই বনের গাছের উপরে নজর পরেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের।
বিগত দুই বছর ধরে প্রয়োজনমত স্থানীয়রা গাছ কেটে নিয়ে গেছে। বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারনে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। গত চার দিন ধরে ওই বনের ছৈলা, কেওড়া ও বাইন গাছসহ দুই শতাধিক গাছ হলদিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি জাকির হোসেন মাদবর ও তার ভাই আলমগীর মাদবর কেটে মজুদ করছে। ওই গাছ জ্বালানি কাঠ হিসেবে কাঠ ব্যবসায়ী শিপন মিয়ার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। গত চার দিন ধরে যুবলীগ নেতা ও তার লোকজন বন কেটে উজাড় করে দিচ্ছেন। যুবলীগ নেতা জাকির মাদবরের ভয়ে স্থানীয়রা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। শনিবার সন্ধ্যায় ওই গাছ ট্রলার যোগে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীনকে জানায়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন ঘটনাস্থলে বন বিভাগ ও ভুমি অফিসের লোকজন পাঠায়। প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলারের মাঝি ও মাল্লারা ভয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় ট্রলার থেকে ওই গাছ উদ্ধার করে ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সিকদারের জিম্মায় রেখে আসেন। এ খবর পেয়ে বন খেকো যুবলীগ নেতা জাকির মাদবর ও তার সহযোগীরা সটকে পরেন।
উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের অফিস বাজার ব্রীজ সংলগ্ন বাঁশবাড়িয়া নদীর চর রবিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, নদীর পশ্চিম পাশের চর থেকে প্রায় ২০০ মিটার বনের ছৈলা, কেওড়া ও বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে গেছে বন খেকোরা। কড়াত ও কুঠার দিয়ে কাটা গাছের মূলের অংশ পড়ে আছে। বন খেকোদের তান্ডবে ছোট গাছও রক্ষা পায়নি। তারা গাছ কেটে বন পরিস্কার করে দিয়েছে।
আসলাম স্ব-মিল মালিক শাহ আলম মৃধা বলেন, গত চারদিন ধরে জাকির মাদবর ও তার লোকজন বনের গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে।
স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন গাজী ও সোহরাফ গাজী বলেন, জাকির মাদবর ও তার ভাই আলমগীর মাদবর বনের গাছ কেটে উজাড় করে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, জাকির মাদবর ওই বন উজাড় করে জমি দখল করবে বলে শুনেছি।
কাঠ ব্যবসায়ী শিপন মিয়া বলেন, আমার কাছে জাকির মাদবর বনের গাছ কেটে জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করেছে। আমি ওই গাছ কিনেছি মাত্র।
ট্রলার শ্রমিক ফোরকান বলেন, ট্রলারে ছৈলা, বাইন ও কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৬’শ মণ জ্বালানি কাঠ ভরেছি।
ইউপি সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, ওই বনাঞ্চলের গাছ আমার কাছে জিম্মায় আছে।
প্রভাবশালী জাকির হোসেন মাদবর বনাঞ্চলের গাছ কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, ওই বনাঞ্চলের জমি আমার নামে সরকার বন্দোবস্ত দিয়েছে। ওই জমি আবাদ করার জন্য গাছ কেটে ফেলেছি।
আমতলী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন বলেন, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের গাছ উদ্ধার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সিকদারের জিম্মায় রেখে এসেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, জব্দকৃত গাছ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। তিনি আরো বলেন, যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৬:৪১ ● ৩৫৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ