কলাপাড়ায় ৫০ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা চলছে কাগজে-কলমে
প্রথম পাতা »
বিবিধ »
কলাপাড়ায় ৫০ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা চলছে কাগজে-কলমে
রবিবার ● ২ ফেব্রুয়ারী ২০২০
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
৯ বছর বয়সী শিশু মাসুম নিজেই জানে না কোন ক্লাশে পড়ছে। পঞ্চমেও হা বলছে চতুর্থ শ্রেণি বলতেও হা বলছে। রোল নম্বর জিজ্ঞেস করায় উত্তর জানা নেই। সামনে বসা সহকারী শিক্ষক ইউসুব আলী জানালেন, মাসুম ক্লাশ ফোরের ছাত্র। রোল নম্বর দুই। একই বেঞ্চে মাসুমের পাশে বসেছিল প্রথম শ্রেণির শিশু জান্নাতি ও তামিম। ওদের কোন অনুভূতি নেই এ বিষয় নিয়ে। চক পাওয়া নিয়ে দু’জনে তর্ক করছিল। পাশের আরেক বেঞ্চে বসেছিল দশ বছরের তামান্না আক্তার ও মীম আক্তার। ওরা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। এবছরই প্রথম এ মাদ্রাসায় ওরা দুইজন। উভয়ে ক্লাশ ফোরে অন্যত্র পড়েছে। সহকারী শিক্ষক ইউসুব আলী ছাড়াও প্রধাান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান একটি কক্ষে বসেই সকল ক্লাশের মোট পাঁচ জন শিশু শিক্ষার্থী নিয়ে বসেছিলেন।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের চুঙ্গাপাশা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় সোমবার বেলা ১১টায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেল। শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে অনিচ্ছার ভঙ্গিতে বের করলেন প্রধান শিক্ষক। দেখালেন তাদের হিসেবে এ মাদ্রাসায় কাগজপত্রে পঞ্চম শ্রেণিতে দুই জন। চতুর্থ শ্রেণিতে চারজন। তৃতীয় শ্রেণিতে একজন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে একজন। আর প্রথম শ্রেণিতে ১৬ জন। মোট ২৪ জন। স্থানীয়দের অভিযোগ যে পাঁচ জন উপস্থিত রয়েছে তাঁদের ধার করে আনা হয়েছে। আর রেজিস্টারে যাদের নাম লেখা আছে ওই ২৪ জনের অর্ধেক ভূয়া নাম। শিক্ষক চারজনের বাকি দুইজনকে পাওয়া যায়নি। প্রধান শিক্ষক সঠিকভাবে জানাতে পারেননি সরকারিভাবে কয় সেট বই পেয়েছেন। সব যেন কাগজে-কলমেই চলছে। অর্ধশত মাদ্রাসার একই দশা। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে শর্ত রয়েছে যেসব ইবতেদায়ী মাদ্রাসার স্থাপনা নির্মানের সন ঠিক থাকতে হবে। পাঠ দানের অনুমতি থাকতে হবে। স্বীকৃতি থাকতে হবে। কাম্যসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী থাকতে হবে। এ খবরে ইবতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত গজিয়ে ওঠতে থাকে। যেখানে কলাপাড়ায় বেন-বেইজের তালিকাভুক্ত ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল ২৩টি। এসব প্রতিষ্ঠানেই শুধু পঞ্চম শ্রেণির অন্যত্র লেখাপড়া করা শিক্ষার্থী ভর্তি দেখিয়ে সমাপনিতে অংশ নেয়ায়। আর সেখানে এখন তালিকা হঠাৎ করে বেড়ে ৬৯ পৌছেছে। কাগজে-কলমে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাতারাতি গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এক তৃতীয়াংশ ইবতেদায়ী মাদ্রাসা থাকতে পারে। একটি দালালচক্র এসব প্রতিষ্ঠানের বৈধতা নেয়ার জন্য লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে তালিকাভুক্ত করে জেলায় পাঠানোর ধান্ধায় নেমেছে। যেন কোটি টাকার একটি বাণিজ্যের ফাঁদ পাতা হয়েছে।
সরেজমিনে তদন্ত করলে সরকারের বিধি-বিধান মানলে ১৫ টি প্রতিষ্ঠান টিকতে পারে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এমনকি নিজস্ব ঘর পর্যন্ত নেই। যখনই তদন্ত আসছে তখনই হায়ার করে ছাত্র-ছাত্রী আনা হয়। অভিজ্ঞজনের দাবি সরকারি অর্থ লোপাট না করেই গোপনে বাস্তবতার নিরিখে যে কয়টি যথাযথ রয়েছে তাদের স্বীকৃতি দেয়া হোক। এব্যাপারে শিক্ষা বিভাগের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি।
এমইউএম/এমআর
বাংলাদেশ সময়: ২১:৫১:০৭ ●
৩৯৭ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)