দশমিনা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর দশমিনায় লাইন্সেস ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা। লাইসেন্সবিহীন দোকানগুলোয় অনিরাপদভাবে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ওই জ্বালানি। আইনের তোয়াক্কা না করেই শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই উপজেলার প্রতিটি বাজারেই চলছে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নিয়মনীতি ও অনুমতিবিহীন অবৈধ গ্যাসের ব্যবসায় অদৃশ্য কোনো কারণে দেখেও না দেখার ভান করছে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই ওই অবৈধ ব্যবসায় চলছে।
ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা দোকানগুলোয় খোলামেলাভাবে গ্যাস বিক্রি করায় চরম ঝুঁকিতে চলাফেরা করতে হচ্ছে ক্রেতা, পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ শিক্ষার্থীদেরও। নিয়মবহির্ভূতভাবে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসায় চললে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা স্থানীয়দের। এ ছাড়াও অতিরিক্ত দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত দাম ও অনুমোদনহীন ব্যবসায় বন্ধে প্রশাসনের সহায়তা চান পথচারী ও সচেতনমহল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা থেকে শুর গ্রামগঞ্জের হাট বাজারেও লাইন্সেস ছাড়া সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। উপজেলার বিকাশ এজেন্টে পয়েন্টে, চায়ের দোকান, মুদির দোকান থেকে শুরু করে মদিমনোহারি, ওষুধ ও ইলিকট্রনিকসসহ প্রায় সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লাইন্সেস ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণভাবে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে।
উপজেলার দোকানগুলো ছাড়াও ঠাকুরের হাটে, বড় গোপালদী বাজারে, আরজবেগী বাজারে, আউলিয়াপুর বাজারে, রনগোপালদী বাজারে, হাজীর হাটে, গছানী বাজারে, আমতলা বাজারে, আয়শার হাট বাজারসহ সড়কের পাশে অনুমোদন ছাড়াই অনেক ব্যবসায়ী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গগুলি দেখিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করে আসছে। এ দোকানগুলোয় নেই প্রাথমিক বিপর্যয় রক্ষায় ড্রাই পাউডার ও সিও ২ সরঞ্জামসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। এতে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ অনুমোদন পাওয়া ব্যবসায়ীরাও। যথাযথ নিয়ম না মেনে এসব ব্যবসায়ী গ্যাস বিক্রি করছে না বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন। দোকানগুলোর সামনে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় গ্যাস সিলিন্ডারগুলো। যার ফলে পথচারীরা ঝুঁকি চলাচল করতে হচ্ছে। যেকোনো সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এমন আশঙ্কা সাধারণ পথচারীদের।
এ ছাড়াও একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে জানান, উপজেলায় গ্যাসের যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ক্রেতাদের জিম্মি করে ব্যবসায়ীরা তার চেয়ে বেশি নিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বোতল প্রতি ৫০-১শ’ টাকা বেশি নেয়। যার ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভুক্তভোগী ক্রেতাদের।
এদিকে বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪ এর দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে লাইসেন্স ছাড়া কোনো ক্ষেত্রে এলপিজি মজুদ করা যাবে না বলা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী আটটি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১ নং ধারায় বলা আছে, আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে।
যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করার কারণে সাধারণ মানুষসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা হুমকির মুখে পড়েছে। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিস্ফোরক অধিদফতরের কোনো রকম অভিযান না থাকায় অবৈধ ব্যবসায়ীরা খোলামেলাভাবে বিক্রি হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম না থাকায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। যার ফলে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হতাহত হয়েছে শত শত মানুষ। এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুনজর দেয়া দরকার।
দশমিনা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইব্রাহিম আহম্মেদ অরবিল বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ছোট বড় হাট বাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে সিলিন্ডার গ্যাসের দোকান। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা অনুমোদনহীন সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসায় করছে। দোকানের সামনে রাস্তার পাশে এসব সিলিন্ডার গ্যাস রাখায় হুমকি মুখে পড়ছে সাধারণ ক্রেতা, শিক্ষার্থী ও পথচারীরা। কারণ সিলিন্ডার গ্যাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো সময় ঘটতে পাড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা । এ ব্যাপারে উপজেলা প্রসাশনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় সিলিন্ডার গ্যাস মজুদের কারণে যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এটা এক ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এছাড়া অনুমোদনহীন ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। লাইন্সেস না থাকা এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি থেকে যায় বলে জানান সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা।
এব্যপারে উপজেলা নিবার্হী অফিসার অতিরিক্ত দায়িতে¦ থাকা সহকারী কমিশনার ভূমি গলাচিপা মো.সুহৃদ সালেহীন জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে এলপি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির নীতিমালা প্রণয়ন ও লাইন্সেসবিহীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে নিয়মের আওতায় আনা হবে।
এসবি/এমআর