সাগরকন্যা আমতলী প্রতিনিধি॥
ঘর বাঁধা হলো না নববধু চম্পার। বিয়ের ১২ দিনের মাথায় স্বামী বাবুল হাওলাদারের হাতে খুন হয়েছেন চম্পা। নিখোজের ১০ দিন পরে বুধবার চম্পার অর্ধ-গলিত মরদেহ চাকামুইয়া ইউনিয়নের গামুরীবুনিয়া গ্রামের স্বামী বাবুল হাওলাদারের বাড়ীর সন্নিকটে একটি গর্ত থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তালতলী থানার ওসি শেখ শাহিনুর রহমানের গড়িমশির কারণেই এ হত্যাকা- বলে অভিযোগ চম্পার বাবার চাঁন মিয়া সিকদারের।
জানাগেছে, এ বছরের ১ জানুয়ারি তালতলী উপজেলার কলারং গ্রামের চাঁন মিয়া সিকদারের কন্যা চম্পাকে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার চাকামুইয়া ইউনিয়নের গামুরীবুনিয়া গ্রামের কাদের হাওলাদারের ছেলে বাবুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। গত ১৫ জানুয়ারী (বুধবার) নববধূকে তুলে নেয়ার কথা ছিল। ১২ জানুয়ারী (রবিবার) রাতে স্বামী বাবুল হাওলাদার শ্বশুরবাড়িতে এসে নববধূ চম্পাকে বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে নববধূ চম্পা ও তার স্বামী বাবুলের সন্ধান যাচ্ছে না। এ ঘটনায় চম্পার বাবা চাঁন মিয়া সিকদার গত ১৪ জানুয়ারী তালতলী থানার জামাতা বাবুলের বিরুদ্ধে সাধারণ ডারেয়ী করেন। কিন্তু তালতলী থানা পুলিশ চম্পারকে উদ্ধার ও জামাতা বাবুলকে গ্রেফতারের কোন পদক্ষেপ নেই। উল্টো এ ঘটনার সাথে জড়িত বাবুলের বড় বোনের জামাই মাহবুব গাজীকে তালতলী থানা পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গেলে ওসি শেখ শাহিনুর রহমান কোন জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই অজ্ঞাত কারণে তাকে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন নিহত চম্পার বাবা চাঁন মিয়া সিকদার।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, তালতলী থানার ওসি দ্রুত পদক্ষেপ নিলে তার মেয়ের এ অবস্থা হত না। ওসির গড়িমশির কারণেই জামাতা বাবুল, জামাতার প্রথম স্ত্রী কহিনুর ও মাহবুব গাজীসহ তার সহযোগীরা সুপরিকল্পিতভাবে তার (চাঁন) মেয়েকে হত্যা করেছে। তিনি ওসির কারণ খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানিয়েছেন। এদিকে গত ১০ দিনেও তালতলী থানা পুলিশ চম্পার কোন হদিস দিতে পারেনি। বুধবার সকালে স্থানীয় লোকজন জামাতা বাবুল হাওলাদারের বাড়ীর সন্নিকটে মাঠে পঁচা গন্ধ পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন অভিকে জানায়। পরে তিনি (ইউপি সদস্য) কলাপাড়া থানার পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে বিলের মধ্যে মাটি চাপা দেয়া অর্ধ-গলিত চম্পার মরদেহ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ মরদেহের ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। এ ঘটনার চম্পার বাবা চাঁন মিয়া সিকদার বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় জামাতা বাবুলকে প্রধান আসামী করে ১১ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপর দিকে বাবুল হাওলাদারের প্রথম স্ত্রী এক সন্তানের জননী কহিনুর বেগমকে বাবুল গত বছর নভেম্বর মাসে তালাক দেয়। এরপরে এ বছর ১ জানুয়ারী চম্পাকে বিয়ে করেন তিনি। চম্পাকে বিয়ে করার পরপরই প্রথম স্ত্রী কহিনুর বাবুলের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। বাবুলও প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে পুনরায় ঘর সংসার করার সিন্ধান্ত নেয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এরপর থেকেই পরিকল্পিতভাবে বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে নেয়ার কথা বলে চম্পাকে হত্যার পরিকল্পনা করে জামাতা বাবুল ও তার প্রথম স্ত্রী কহিনুর বেগম। জামাতা বাবুল হাওলাদার তার প্রথম স্ত্রী কহিনুর বেগম ও বাবুলের বড় বোনের জামাতা মাহবুব গাজীর পরিকল্পনাই সুপরিকল্পিত খুন হয় চম্পা বলে অভিযোগ করেন চম্পার বাবা চাঁন মিয়া সিকদার।
কলাপাড়া উপজেলার চাকাম্ইুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জাকির হোসেন অভি বলেন, স্থানীয় লোকজন মাঠে গরু চরাতে গিয়ে দুর্গন্ধ পেয়ে আমাকে জানায়। পরে স্থানীয় চৌকিদার ও লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি মাটি চাপা দেয়া মরদেহের মুখমন্ডল দেখতে পাই। পরে কলাপাড়া থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, নববধু চম্পার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি ও আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে তালতলী থানার ওসি শেখ শাহিনুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এমএইচএকে/কেএস