বানারীপাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বানারীপাড়ায় সরকারী ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুলের শিক্ষার্থীদের বই আটকে রেখে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ১২৫০ টাকা করে ভর্তি ‘ফি’ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার ওই স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও সরকারী নিয়ম বহির্ভূত ভাবে সরকারী বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুলের শিক্ষার্থীদের বই আটকে রেখে ১২৫০ টাকা করে ভর্তি ‘ফি’ নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারা শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের মানি রিসিভও দিচ্ছেন না। ফলে শিক্ষার্থীদের ওই ভর্তি ‘ফির’ টাকা কোন খাতে নেয়া হচ্ছে সে বিষয়টিও অজানা থেকে যাচ্ছে।
এবিষয়ে সরকারী বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিদয় ইসলামের পিতা দিনমজুর আব্দুল জলিল শনিবার জানান, তিনি ১ জানুয়ারী সকাল ১০টায় তার ছেলে রিদয় ইসলামকে নিয়ে সরকারী বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করতে যান। এ সময় ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ তার কাছে ছেলের ভর্তির জন্য ১২৫০ টাকা জমা দিতে বলেন। এসময় তিনি ৫’শ টাকা দিয়ে তার ছেলেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করার পাশাপাশি পাঠ্যবই দেয়ার দাবী জানালে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে পরবর্তীতে পুরো টাকা নিয়ে অফিস কক্ষে এসে ছেলে ভর্তি করে বই নিতে বলেন। পরে তিনি ওই ৫’শ টাকা নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করার জন্য স্কুলের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লার কাছে যান। তিনি তার কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি শুনে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ কান্ত হাওলাদারকে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেয়ার পাশাপাশি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী পাঠ্যবই দেয়ার আহবান জানান। এর পরেও স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরো টাকা না পাওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেননি।
অবশ্য এ বিষয়টি অস^ীকার করেছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ কান্ত হাওলাদার। তিনি সাবেক সভাপতির ফোন পেয়ে তার কাছে ওই ছাত্রকে পাঠিয়ে দিতে তাকে বলেছেন বলে দাবী করেন।
এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দিনমজুর আব্দুল জলিল বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লার সাথে প্রধান শিক্ষকের কথা হওয়ার পরেও পুরো টাকা না দেয়া পর্যন্ত তার ছেলেকে ওই স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি। তিনি ওই ঘটনার তিন দিন পর অন্যের কাছ থেকে কোন রকম ৭৫০ টাকা ধার করে মোট ১২৫০ টাকা দিয়ে তার ছেলে রিদয় ইসলামকে ওই স্কুলে ভর্তি করে পাঠ্যবই নিয়ে এসেছেন। এ সময় তিনি সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ১২৫০ টাকার মানি রিসিভ চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে ওই টাকার কোন ধরনের মানি রিসিভ দেননী। একই ভাবে ওই স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিম’র পিতা ভ্যানচালক সুমন হাওলাদার জানান, স্কুল খোলার শুরুতেই তার মেয়ে মিমকে নবম শ্রেণীতে ভর্তি করার জন্য সরকারী বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুলে নিয়ে যান। এসময় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার কাছে মেয়ের ভর্তির জন্য ১২৫০ টাকা দাবী করেন। এ সময় সে ওই টাকা দিতে না পারার কারণে ওই দিন তার মেয়েকে সেখানে ভর্তি করতে পারেননী এবং পাঠ্যবইও পাননী। দু’দিন পরে তিনি অন্যের কাছ থেকে ধার-কর্জ করে ১২৫০ টাকা যোগার করে তার মেয়ে মিমকে ওই স্কুলের নবম শ্রেণীতে ভর্তি করে পাঠ্য বই নিয়ে আসেন। সরকারী নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ভর্তি ‘ফি’ সহ অন্যান্য খরচের মোট ১২৫০ টাকা ছাড়া ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের শ্রেণী উন্নয়ন করা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এবিষয়টি অশ^ীকার করে সরকারী বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, যে শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তিই হয়নি, তাকে কিভাবে বই দিব। তাছাড়া আমরা স্কুলে ভর্তি হওয়া কোন শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই আটকে রাখিনী। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি ‘ফি’ ৬ টাকা, ষষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি ‘ফি’ ১০ টাকা ও সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি ‘ফি’ ১২ টাকা এবং নবম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে ভর্তি ‘ফি’ ১৫ টাকা, অর্থাবস্বকীয় ব্যায় ২০ টাকা, নৈশ প্রহরী ২০ টাকা, আইডি কার্ড, মাসিক বেতন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগীতা, মসজিদ, মিলাদ, সফটওয়ার কেনা ও শ^রেশ^তী পূজার চাঁদাসহ এক বারে ১২৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে সরকারী বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুলের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লীষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তি করবেন। এক্ষেত্রে তারা নিয়ম বহির্ভূত অবে এক সাথে ১২৫০ টাকা করে ভর্তি ‘ফি’ নেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বই আটকে রেখে সরকারের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করেছেন। সাবেক পৌর মেয়র গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী ১ জানুয়ারী দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই বিতরণ করার কথা থাকলেও সরকারী বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ভর্তির নামে বই আটকে রেখেছেন।
এবিষয়ে কোন কিছুই জানা নেই বলে দাবী করেছেন, সরকারী বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট স্কুলের সভাপতির দায়ীত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ। তিনি বলেন, স্কুলের কোন শিক্ষক যদি সরকারী নিয়ম বহির্ভূত কাজ করে থাকেন, তাহলে তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জিএমআর/এমআর