এস কে রঞ্জন,কলাপাড়া॥
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় সরকারের চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। এখানে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয় গভীর সমুদ্রবন্দর পায়রা, ১৩২০ মেঘাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এর মতো একাধিক মেঘা প্রজেক্ট। এসব উন্নয়নের কাজকে অগ্রসর করার জন্য সরকারের পাশাপাশি একাধিক সংস্থা অভিরাম কাজ করে যাচ্ছে।
পায়রা বন্দরের উন্নয়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মমূখী শিক্ষার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ সকল কর্মমূখী শিক্ষার প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে ডেভেলপমেন্ট অর্গানইজেশন অব দি রুরাল পূয়র (ডরপ)। ডরপ’র অধীনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেসিক কম্পিউটার, ড্রাইভিং, টার্কি পালন, হাঁস-মুরগী পালন, সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ, রাজমিস্ত্রি প্রশিক্ষণসহ ১০ টি ভিন্ন ভিন্ন কোর্সে মোট ১৩৮৫ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত হয়ে উপকৃত হয়েছেন বলেও জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হারুন হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থী ডরপ হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের বাণাতী বাজারে কম্পিউটার কম্পোজের ব্যবসা খুলেছে। রিয়ামনি ব্যাংকে চাকরী পেয়েছে। তিন শত শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে। হাঁস-মুরগী পালনের মাধ্যমে হাজেরা বেগম, নাছিমা বেগম ও রিনি বেগমসহ অনেকেই খুজে পেয়েছে তাদের সুখের ঠিকানা। এরা সকলেই পায়রা বন্দরের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার হিসেবে ‘ডরপ’ হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থান খুজে নিয়েছে।
বর্তমানে ডরপ’র অধীনে মোট পাঁচটি কোর্স চালু রয়েছে। পায়রা বন্দরের মূল ফটকের পাশের ভবনে বেসিক কম্পিউটার কোর্স চালু রয়েছে। এতে ২৫ জন করে দুটি শিফটে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে দেখা যায়। সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি ডরপ’র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে সকল শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
লালুয়া ইউনিয়নের সুমনা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সরকার পায়রা বন্দরের কাজের জন্য আমাদের পৈত্রিক ভিটে-বাড়ী নিয়ে গেছে। ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে আমাদের কর্মমূখী শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। ডরপ’র অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। নাহিদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ডরপ আমাদের অত্যান্ত যতœ সহকারে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমরা যাতায়তের জন্য ভাতাও পাচ্ছি।
ডরপ’র অধীনে বেসিক কম্পিউটার কোর্স ছাড়াও উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সেলাই প্রশিক্ষণ, রাজমিস্ত্রি প্রশিক্ষণ, টার্কি প্রশিক্ষণ ও হাঁস-মুরগী প্রশিক্ষণ কোর্স চালু রয়েছে। প্রতিটি কোর্সের দুই শিফটে ২৫ জন করে মোট ৫০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিতে সুযোগ পায়। এছাড়াও কলাপাড়া মোজাহার উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ মাঠে ডরপ’ এর অধীনে ড্রাইভিং কোর্সের প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে।
ডরপ’র এ প্রশিক্ষণ প্রকল্পের টিম লিডার জেবা আফরোজা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত আনুমানিক ৪২ পরিবার থেকে একজন করে সদস্যকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তিন সপ্তাহ ও একমাসের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীগণ প্রতিদিন ৩০০টাকা ও তিন মাস ও ছয় মাসের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীগণ প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে প্রশিক্ষণ ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
পায়রা বন্দর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেন এম.মুনিরুজ্জামান জানান, সরকার পায়রা বন্দর নির্মাণের ফলে ভূমি ও বাড়িঘর হারিয়েছে তাদের প্রতিটি পরিবারকে পুনর্বাসনের পর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব পরিবারের সদস্যদের জীবনযাত্রার মান যাতে ব্যহত না হয়, তারা যাতে উন্নত জীবন যাপন করতে পারে সে জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প আয়ের পথ তৈরি করতে তাদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণের পর তাঁরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পাচ্ছে।
তবে ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারের সদস্যদের দাবি, তারা প্রশিক্ষণ শেষে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন ঋণ সুবিধা। সরকার যদি তাঁদের ঋণ সুবিধা প্রদান করেন তাহলে তারা ভবিষতে কর্মসংস্থানেও সফল হবেন।
এসকেআর/কেএস