রাঙ্গাবালীতে নামসর্বস্ব মাদ্রাসার নামে বই বরাদ্দ

প্রথম পাতা » লিড নিউজ » রাঙ্গাবালীতে নামসর্বস্ব মাদ্রাসার নামে বই বরাদ্দ
বুধবার ● ১ জানুয়ারী ২০২০


আমলিবাড়িয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্র্রাসা

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি॥

ঘড়ির কাটায় ১০ টা ৪৫ মিনিট। তখন সারাদেশে বই উৎসব চলছিল। কিন্তু আমলিবাড়িয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্র্রাসায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। শিক্ষার্থীদের উৎসব আমেজতো দূরের কথা, প্রতিষ্ঠানে কোন চেয়ার-টেবিলই নেই। পুরো প্রতিষ্ঠান একদম ফাঁকা এবং শূনসান নীরবতা। উত্তোলন হয়নি জাতীয় পতাকা। কারণ প্রতিষ্ঠানের কোন কার্যক্রমই নেই।

বুধবার সরেজমিনে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির মাঠে স্থানীয় কৃষকদের আঁটি বাঁধা আমন ধানের স্তুপ চোখে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ বছর ধরে মাদ্রাসাটির কোন শিক্ষা কার্যক্রম নেই। নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু মাত্র এক বছর আগে পাঁচ কক্ষের একটি  টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়। আর সেখানে মাস দু’য়েক আগে একটি সাইনবোর্ড সাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানের নামে এবার ৭২০ পিস সরকারি বই বরাদ্দ  দেওয়া হয়েছে।

আমলিবাড়িয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্র্রাসা

প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডের তথ্যমতে, ১৯৮১ সালে মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়। যার মাদ্রাসা কোড নম্বর-৫৫২৪৮। কাগজকলমে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জাকির হোসেন, জুনিয়র মৌলভী আইয়ুব হোসেন, জুনিয়র শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, ইবতেদায়ী ক্বারী আব্দুর রউফ, জুনিয়র শিক্ষক রুহুল আমিনকে দেখানো হলেও তা নামমাত্র। এদের মধ্যে প্রধান জাকির হোসেন একটি মসজিদের ইমাম এবং ক্বারী আব্দুর রউফ বাহেরচর পোস্ট অফিসের পিয়ন। জানতে চাইলে ওই মাদ্রাসার প্রধান মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমিতো এলাকায় নাই। সহকারীদের বই বিতরণ করতে বলছি। আমাদের চেয়ার-টেবিল নাই। চেয়ার টেবিল আমাদের নিজেদেরই ম্যানেজ করতে হবে। আমাদেরতো কোন অনুদান দেয় না। হয়তো অনেকের ঘরও নেই। আমরাতো সংকটের মধ্যে আছি। এলাকায় জরিপ করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বই দিব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আমি মসজিদের দায়িত্বে আছি আর ক্বারী রউফ পার্টটাইম ওটায় (পোস্ট অফিসে) কাজ করে।’

এমন চিত্র শুধুমাত্র আমলিবাড়িয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাতেই নয়! সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ছোটবাইশদিয়ার তিল্লা আমিনা খাতুন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার অস্তিত্ব হিসেবে একটি মসজিদের সঙ্গে সাইনবোর্ড ঝুলানো রয়েছে। একই ইউনিয়নের বলাহী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার অবকাঠোমো কাঠ দিয়ে তৈরি করা হলেও টিনের ছাউনি দেওয়া হয়নি। এছাড়া রাঙ্গাবালীর পূর্ব নেতা আকরামিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার কাজ নামমাত্র একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসার মধ্যে চালানো হচ্ছে। ফলে কার্যক্রম না থাকায় ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে বই বিতরণও করা হয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য উপজেলার ২৫টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় ১৪ হাজার ৭৬০ খানা বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যপুস্তক বরাদ্দ দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে বিনামূল্যে সরকারি পাঠ্যপুস্তক বিতরণের কথা থাকলেও   উপজেলার অধিকাংশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় বই বিতরণ করা হয়নি। মূলত ওইসব প্রতিষ্ঠানে  কাগজকলমে শিক্ষার্থী দেখিয়ে বই বরাদ্দ করা হয়েছে। বাস্তবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন শিক্ষার্থী নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘বছরের প্রথমদিন থেকেই বই বিতরণ করার কথা। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকির দায়িত্ব দুই শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছিল। এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কেএইচ/কেএস 

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৭:১৯ ● ৪৭৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ