আনোয়ার হোসেন আনু, কুয়াকাটা থেকে॥
পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেলের গেষ্ট রেজিষ্টার চেকিং এর নামে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পর্যটকদের হয়রানী করার অভিযোগ করেছেন আবাসিক হোটেল মালিকরা। হোটেলের গেষ্ট রেজিষ্টারে নাম দেখে রুমে গিয়ে এবং সেল ফোনে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে স্বামী স্ত্রী কিনা। কোন সুনিদিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশের এমন আচরণে হতভম্ব পর্যটকরা। মহিপুর থানা পুলিশের এধরনের কর্মকান্ড বন্ধ না হলে কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ হোটেল বন্ধ রেখে আন্দোলনে যাবার হুমকি দিয়েছেন। তবে মহিপুর থানার ওসি বলছেন, আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ গেষ্ট রাখার ক্ষেত্রে কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করছে না। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ রোধ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের দেয়া গেষ্ট রেজিষ্টার প্রতিদিন চেকিং করা হচ্ছে। এতে কোন পর্যটককে হয়রানী করা হচ্ছে না বলেও তিনি দাবী করছেন।
পুলিশ ও আবাসিক হোটেল সুত্রে জানা গেছে, গত ১ সপ্তাহ আগে থেকে মহিপুর থানা পুলিশের তরফ থেকে প্রতিটি আবাসিক হোটেলে একটি করে গেষ্ট রেজিষ্টার দেয়া হয়েছে। হোটেলে অবস্থানরত পর্যটকদের পুলিশের দেয়া ১৮টি প্রশ্ন সম্মিলিত ফরম পূরণ করে হোটেলে অবস্থান করতে হবে। আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব গেষ্ট রেজিষ্টার ছাড়াও পুলিশের দেয়া ফরম পুরণ করে গেষ্ট রাখছেন। ওই গেষ্ট রেজিষ্টার প্রতিদিন সকালে এসে থানা পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। এর দ্বায়িত্বে থাকা কতিপয় অতি উৎসাহী পুলিশ অফিসার ওই গেষ্ট রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ পর্যটকদের রুমে গিয়ে এবং মোবাইল ফোনে জিজ্ঞাসা করছে তারা স্বামী স্ত্রী কিনা। হোটেলে অবস্থানরত পর্যটকরা কুয়াকাটায় দুই তিন দিনের জন্য ভ্রমণে আসলেও পুলিশের এমন অনধিকার চর্চায় ভয় পেয়ে ১দিন অবস্থান করেই রুম ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে হোটেল মালিকরা অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে আবাসিক হোটেলে অবস্থানরত পর্যটকদের মালামাল হারিয়ে যাবার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ ছাড়াই হোটেল স্টাফদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হোটেল মালিকরা বলেন, থানায় কোন লিখিত অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কোথাও যায়না। সেখানে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ স্টাফদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। হোটেল রুমে তল্লাসি চালানো হচ্ছে।
আবাসিক হোটেল আল মামুন’র ব্যবস্থাপক মোঃ রেজাউল জানান,গত ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে পুলিশ গেষ্ট রেজিষ্টার নিয়ে যাবার সময় এএসআই মতিন রেজিষ্টারে থাকা পর্যটকদের রুম নম্বরে গিয়ে জানতে চেয়েছেন তারা আসল স্বামী স্ত্রী নাকি নকল। এমন প্রশ্নে রুমে থাকা পর্যটক দম্পত্তিরা পুলিশি হয়রানীর ভয়ে রুম ছেড়ে চলে গেছেন বলে এমন অভিযোগ একাধিক হোটেল মালিকদের।
আবাসিক হোটেল সৈকতের ব্যবস্থাপক মোঃ সোহেল জানান,গত ১৬ ডিসেম্বর ভিটালাক ডেইরী এন্ড কোম্পানীর ২৩জনের একটি গ্রুপ তার হোটেলে ১২টি রুম নেয়। তারা পরদিন ১৭ ডিসেম্বর ভোর পাঁচটায় রুম ছেড়ে দিয়ে বরিশালে বিভাগীয় সম্মেলণে অংশগ্রহণ করেন। বরিশালে গিয়ে জানান, রুমে একটি মানিব্যাগ ফেলে রেখে গেছেন। ওই ব্যাগে নগত ৫ হাজার টাকা ও মূল্যবান কিছু কাগজপত্র রয়েছে। এমন মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে মহিপুর থানার ওসি’র নেতৃত্বে পুলিশ তাদের হোটেল রুমে তল্লাসি চালায়। ওই সময়ে রুমে অন্য গেষ্ট অবস্থান করছিল। পরে রুমের দ্বায়িত্বে থাকা হোটেল বয় ও সিকিউরিটি গার্ডকে থানায় নিয়ে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোশিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এম এ মোতালেব শরীফ বলেন, পুলিশ হোটেলে হোটেলে গিয়ে চেকিং এর নামে পর্যটকদের হয়রানী করছে। কোন প্রমাণ ছাড়াই মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে স্টাফদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মালিকদের হয়রানী করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কুয়াকাটায় কোন পর্যটক আসবে না। আমাদের পক্ষেও ব্যবসা করা সম্ভব নয়। এ বিষয় নিয়ে এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পরিষদ শীঘ্রই বৈঠকে বসবেন। তিনি বলেন, পুলিশের এমন হয়রানী বন্ধ না হলে তারা হোটেল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন।
মহিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ সোহেল আহম্মেদ জানান, কিছু আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাবের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আবাসিক হোটেলগুলো গেষ্ট রেজিষ্টারের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম মানছেন না। মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য জেলা পুলিশের তরফ থেকে এজন্য একটি গেষ্ট রেজিষ্টার ফরম দেয়া হয়েছে। পুলিশ কাউকে হয়রানী করছে না। পুলিশের কারও বিরুদ্ধে পর্যটকদের হয়রানী করার সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।