বাউফলে রাজাকারের তালিকায় ভাতাভোগি মুক্তযোদ্ধার নাম!

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » বাউফলে রাজাকারের তালিকায় ভাতাভোগি মুক্তযোদ্ধার নাম!
বুধবার ● ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯


---

অতুল পাল, বাউফল থেকে॥
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় বাউফলের এক ভাতাভোগি মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকায় সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি এবং চলছে তালিকা নিয়ে নানামূখি সমালোচনা। ঘটনাটি এখন বাউফলে টক অব দি টাউনে পরিণত হয়েছে। রাজাকারের তালিকায় থাকা ওই মুক্তিযোদ্ধার নাম মৃত্যু: এ.বি.এম. আবদুল খালেক, পিতা- মৃত্যু: তোজম্বর আলী মাতব্বর। তাঁর বাড়ি উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের  চন্দ্রপাড়া গ্রামে। ২০০২ সালের ১ ডিসেম্বর স্বারক নং মু:বি:ম:/সা/পটুয়াখালী/প্র-৩/৬১/২০০২/৩৯ তাঁর নামে ইস্যুকৃত সাময়িক সনদপত্রে তাকে মুক্তিযোদ্ধা বলে উল্লেখ রয়েছে।
সরেজমিন জানা গেছে, লাল মুক্তি বার্তায় মরহুম ওই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেকের নম্বর-০৬০৩০২০৪১৩, গেজেট নং-২০২। এছাড়াও মুক্তিবার্তা প্রকাশিত হওয়ার আগে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত সংশোধিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ৭৮-৩৮-৭৭-০০৩ নম্বরে তাঁর নাম অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর পরিবার নিয়মিত ভাতা পেয়ে আসছে। মরহুম মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৯ সালের ৬ জুন মৃত্যুবরণ করেছেন। ভাতাভোগি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভূক্ত থাকা সত্ত্বেও রাজাকারের তালিকায় তাঁর নাম প্রকাশিত হওয়ায় তীব্র  অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারের সদস্যসহ মুক্তিযোদ্ধা এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
পটুয়খালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার ও মুক্তিযুদ্ধকালিন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের পটুয়াখালী জেলার অন্যতম সদস্য মরহুম কমরেড মোকছেদুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যায়ন পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এ.বি.এম.আবদুল খালেক সিও-ডেভেলভমেন্ট অফিসে ওভারশিয়ার পদে কর্মরত থাকাকালিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচার কাজে সহযোগিতা এবং তাদেরকে সংগঠিত করার জন্য চাকুরির মায়া ত্যাগ করে বর্তমান বাউফল উপজেলা পরিষদে থাকা একমাত্র সাইক্লোস্টাইল মেশিনটি (ছাপার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র) মুক্তিবাহিনীর হাতে তুলে দেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালিন পটুয়াখালী জেলা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সংগঠক ও ভাষা সৈনিক সৈয়দ আশরাফ ও অনান্য সদস্যদের সথে একাধিকবার রুদ্ধদার বৈঠক করেন এ.বি.এম. আবদুল খালেক। বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো তাঁর দেয়া সাইক্লোস্টাইল মেশিনে ছাপিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রচারপত্র হিসেবে বিলি করা হতো। পাববাহিনী ও রাজাকারদের কাছে এ তথ্য প্রকাশ পেলে তাঁর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির পাঁচটি ঘর পুড়িয়ে দেয় এবং তাঁর ১৪ জন স্বজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এক পর্যায়ে এ.বি.এম.আবদুল খালেক  বাউফল উপজেলায় সংঘটিত যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন”।
এবিষয়ে মুক্তিযুদ্ধকালিন আঞ্চলিক কমান্ডার ও পটুয়াখলী জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ বারেক হাওলাদার বলেন. আমার জানা মতে বাউফল উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে এ.বি.এম. আবদুল খালেক নামে কোন রাজাকার ছিলনা।
এ বিষয়ে এ.বি.এম. আবদুল খালেকের ছেলে ব্যারিষ্টার মোঃ মোজাহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি আক্ষেপের সাথে বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারের নিতীমালার সকল নিয়মানুযায়ী আমার বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত রয়েছে।  রাজাকারের তালিকায় নাম থাকা যে কতটা কষ্টের ও দুঃখের তা কেবল ভূক্তিভোগি পরিবারে সন্তানরাই অনুভব করতে পারেন। দ্রুত এই তালিকা সংশোধনের দাবি জানান তিনি।
তালিকা সম্পর্কে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিজুস চন্দ্র দে বলেন, তালিকায় এধরণের কোনো অসঙ্গতি  থাকলে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:১১:৫১ ● ৫৪৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ