বাউফল (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
১৯৭১ এর রণাঙ্গনে স্বাধীন-সার্বভৌম একখন্ড ভূমি আর লাল-সবুজের একটি পতাকার স্বপ্ন নিয়ে টগবগে যে যুবকটি শক্রদের মোকাবেলা করতে সন্মূখযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, সে আজ দারিদ্রের কষাঘাতে জীবনযুদ্ধে পরাস্থ। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা সবই এখন তার দু:স্বপ্ন। দেশের জন্য যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দিতে পারলেও জীবন ও পরিবারের সুখ-শান্তির জন্য নিষ্ঠুর নিয়তির কাছে সে পরাজিত। জীবনের পরান্ত বেলায় এসেও ঠাঁই হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়। ১৯৭১ এর সেই যুবকটি এখন সত্তরের কোঠা পেরিয়ে বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছে। এমনই এক হতভাগ্য যোদ্ধা হলো পটুয়াখালী জেলাধীন বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মল্লিকডোবা গ্রামের মৃত. আলী হোসেন হাওলাদারে পুত্র আঃ রাজ্জাক হাওলাদার (৭০)।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া সেই যোদ্ধা আ: রাজ্জাকের অত্যন্ত দুর্বল ও ক্ষীণ মুখের কথায় জানা গেছে, ১৯৭১ সালে নিজ ইউনিয়ন কেশবপুরের মো. নূরু মুহুরি, মো. সেকান্দার তালুকদার, আঃ কাশেম মেলকার, মো. ইউনুছ ডাক্তারসহ আরও কয়েকজন টগবগে যুবককে সাথে নিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন আ: রাজ্জাক। মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ. জলিল ও স্থানীয় কমান্ডার গাজী পঞ্চম আলীর নেতৃত্বে তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
দেশ স্বাধীন হলে সহযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পেলেও নিয়তির ঘোরপাকে বাদ পড়েন আ: রাজ্জাক। নাম তালিকাভুক্ত করতে একাধিকবার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল বরাবর আবেদন নিবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছেন প্রতিবারই। একথা বলতেই দু’চোখের দু’কোঠো থেকে জল বেড়িয়ে পড়ছে। তার হৃদয়ে যেন ডানা কাটা দুরন্ত পাখির ছটপটানি। চেহারায় যেন বিতৃষ্ণা ভেসে উঠে। নিয়তির কাছে যেন এক যোদ্ধার অকৃপণ আত্মসমর্পণ। দরিদ্রাহত এই যোদ্ধা এক সময় দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হলেও পারেননি নিজের জন্য কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা করতে। তাই স্বাধীনতার পর থেকেই জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য রোজ আয়ের কাজ বেছে নিতে হয় তাকে। ২০১২ সাল থেকে শরীরে বাসা বাঁধে ডায়বেটিকস, উচ্চ রক্ত চাপ ও চক্ষুরোগসহ নানা ব্যধি। সু-চিকিৎসার অভাবে ইতিমধ্যেই একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে অক্ষম হয়ে পরেছেন। পৈত্রিক সূত্রে কোন জমিজমা না পাওয়ায় হতদরিদ্র আঃ রাজ্জকের এমনিতেই নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তার উপর যুক্ত হয়েছে চিকিৎসা খরচ। সংসারের চাকা ঘোরাতে নুন্যতম সম্মানজনক সব আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেলে নির্মম বাস্তবতার মুখে পড়ে তাকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াতে হচ্ছে অন্যের কাছে। সেই অর্থ দিয়েই কোন রকমে সংসার চলে। ভাইয়ের দেয়া অর্থে তৈরী ছোট্র একটি দুই চালার ঘরে বসবাস করেন তিনি। আ: রাজ্জাকের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও পাঁচ ছেলে রয়েছে। ছেলেরা অন্যের সাথে কাজ করে তাদের সংসার চালাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা আ: রাজ্জাক এখনও আশা করছেন, সরকার তাকে তালিকাভূক্ত করবেনই।
কেশবপুর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন লাভলু জানান, রাজ্জাক ভাই একাধিকবার তালিকাভূক্তির জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সকল কাগজপত্র দিতে না পাড়ায় সে তালিকাভূক্ত হতে পারছেন না। তবে সরকারের বিশেষ বিবেচনায় তালিকাভূক্ত হতে পারলে শেষ বয়সে হয়তো একটু শান্তি পেত। চেয়ারম্যান জানান, আমারা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সম্ভব সকল সহযোগিতা তাকে দেয়ার চেষ্টা করি।
এপি/এমআর