কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
এই বছর পাঁচেক আগেও প্রতিদিন গড়ে ত্রিশ থেকে চল্লিশটা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করতাম। প্রতিটা গাছে কম করে হলেও এক থেকে দেড় লিটার রস হতো। এরস আবার তাপালে (টিনের গুলি) করে জাল (গরম করা) দিয়ে তৈরী করা হতো গুড়। প্রতি লিটার গুড় বিক্রি হতো পঞ্চাশ থেকে ষাট টাকা দরে। আর এগুড় বিক্রি করে যে আয় হতো তা দিয়েই চলে যেত পুরো বছরের ভরনপোষন। কিন্তু এখন আর গাছই নেই, রস পাবো কই। এখন মাত্র দুই তিনটা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। বিক্রি তো দূরের কথা এরস নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারেনা। কথাগুলো এই প্রতিবেদকের সাথে বলছিলেন রাঙ্গাবালী উপজেলার নয়া ভাংগুলি গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব খেজুর গাছি সৈয়দ প্যাদা।
কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীসহ উপকূলীয় এ অঞ্চলে এক সময় প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। সড়কের পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাড়ানো অনেক খেজুর গাছ লক্ষ করা যেত। অনেকে আবার বানিজ্যিকভাবে খেজুর গাছ চাষ করতেন। শীত মৌসুমে অনেক গাছি খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করত। রস সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছে হাড়ি ঝুলিয়ে পরদিন সকাল বেলা তীব্র শীত উপেক্ষা করে গাছে উঠে রস সংগ্রহ করত গাছিরা। গাছ থেকে তাজা রস সংগ্রহ করে জাল দিয়ে তৈরী করা হতো পাটালি অথবা ঝোলা গুড়। শুধু মাত্র খেজুরের গুড় বিক্রি করেই সংসার চালাত অনেক গাছি। কিন্তু বর্তমানে ইভাটার আগ্রাসনে বিলুপ্ত প্রায় খেজুর গাছ। এছাড়া খেজুর গুড়ের চাহিদা সত্ত্বেও দাম অনেকটা কম থাকায় অনেক গাছিই আগ্রহ হারাচ্ছেন রস সংগ্রহের উপর। তবে এখন খুব কম সংখ্যক এলাকার গাছিরা খেজুর গাছ কাটতে ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ধানখালী ইউনিয়নের খেজুর গাজী ষাটোর্ধ্ব রহমান মিয়া জানান, খেজুর গুড়ের চাহিদা অনেক, কিন্তু দাম অনেক কম। এছাড়া এখন তো গাছই নেই। তাই রসও কম হয়। একই এলাকার আরেক গাছি ফজলু মুন্সী জানান, যে হারে ইটভাটা বাড়ছে তাতে খেজুর গাছ না থাকারই কথা, আর কয়েক বছর অতিবাহিত হলে নতুন প্রজন্ম জানবেই না যে, খেজুর গাছ বলতে কিছু ছিল।
কলাপাড়া উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, আমরা কৃষকদের খেজুর গাছের বীজ রোপনে উৎসাহিত করি। তবে বন বিভাগের খেজুর রোপনে আপাতত কোন পদক্ষেপ নেই।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, খেজুর গাছ জন্মানোর জন্য যে মাটি প্রয়োজন, সে মাটি এখন আর নেই। এছাড়া খেজুর গাছের চেয়ে অন্য ফল গাছ রোপনে কৃষকদের লাভ বেশি হয়। তাই এখন আর কেউ খেজুর গাছ রোপন করেনা। তবে সরকারীভাবে পতিত জমিতে খেজুর গাছ রোপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এমই/এমআর