ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
১৬ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ১৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ২ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে পাওয়া যাবে ২৮৫ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে সাড়ে ১৯ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া। ২০২১ সালে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে চলমান একটি প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত সাড়ে ৪ লাখ ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রথমধাপে একটি প্রকল্পে পল্লী বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লাখ গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসেই ১৫ লাখ গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। একই প্রকল্পের সময়-ব্যয় বৃদ্ধি করে আরো সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। ফলে সময় ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রথমে প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিলো ৬ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। এখন অতিরিক্ত সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ দিতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা।
গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রসার, ক্ষুদ্র পরিসরে শিল্পায়ন, নতুন কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নের চলমান প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ। সভায় ৭০টি মিটার গেজ (এমজি) ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনার জন্য দুই হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে ‘৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড স্থাপন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা।
এছাড়া কক্সবাজার লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চারলেন প্রকল্পে ২৮৮ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এদিনের সভায়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতায় সব মিটার গেজ রেলপথকে পর্যায়ক্রমে ব্রডগেজে রূপান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে রেলওয়ে প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, রেলওয়ের দক্ষতা বাড়াতেই ব্রডগেজে যেতে হবে। আমরা বিদেশ থেকে রেলের ক্ষুদ্র যত্রাংশ কিনছি, ভবিষ্যতে দেশেই এগুলো বানাতে হবে। রেল পার্টস তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো তৈরির নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের। সমন্বিত পরিবহন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল, নৌ ও সড়ক পথে সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়তে হবে। উন্নত দেশে এমন ব্যবস্থা চালু আছে। এক টিকিটে সব পরিবহনে যাতায়াত করা যায়। ব্যয় সাশ্রয়ী করার জন্য গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রকল্পের জেলার নাম উল্লেখ থাকতে হবে। ইন্টারনেটের গতি বাড়িয়ে বিটিসিএলকে আরো শক্তিশালী করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, সব আবাসন ও শিল্প কারখায় বর্জব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। ভূমি ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন ফসলী জমি, চর ইত্যাদি যেন নষ্ট না হয়। স্থাপনা নির্মাণ করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। এ বিষয়ে আইন করতে হবে। ভূমি ব্যবহারে সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, হাওর উন্নয়নের জোর দিতে হবে। সব থেকে রিসোর্সফুল এলাকায় উন্নয়নে জোর দিতে হবে। একনেক সভায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সব কার্যক্রমের প্রসংশা করেন প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা।
এফএন/এমআর