দশমিনা(পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ধান উৎপাদনে বিখ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালীর দশমিনা ধান উৎপাদন খরচ না উঠায় ও ন্যায্য মূল্য না পেঁয়ে দিন দিন ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। ফলে ধান চাষের মৌসুমেও অনেক জমিই অনাবাদি রয়েছে। এতে আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে উপজেলার কৃষক।
দশমিনা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২১হাজার ১শ” হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। বর্তমানে ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। ধান কাটতে শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। আর কৃষকরা ধান বিক্রিতে ভাল দাম পাচ্ছে না বাজারে। ধান বিক্রি করে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে। আবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত’ হচ্ছে বর্গা চাষিরা। তারা জমির মালিককে জমি বর্গার টাকা ও ধান পরিশোধ করে উৎপাদন খরচই তুলতে পারছে না। বাধ্য হয়ে অনেক বর্গা চাষি জমির মালিককে জমি ফেরত দিচ্ছেন। আগ্রহ হারাচ্ছে ধান চাষ করতে। ধান চাষ বাদ দিয়ে তারা চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। কিন্তু এত লোকসান খেতে চাচ্ছে না।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ানের দক্ষিন দাসপাড়া গ্রামের কৃষক শংকর চন্দ্র জানান, কয়েক বছর যাবৎ ৩একর জমি চাষ করে আসছি। ধান উৎপাদনে জন্য সার ঔষধ খরছ করে যে ধান হয় বাজার ভালো হলে কোন লোকসান হয় না। তবে গতকয়েক বছর যাবৎ লোকসান কাটাইয়া উঠতে পারিনা। একই গ্রামের শাহজালাল হাং বলেন, কয়েক মৌসুমে ধান চাষ করে মালিককে লিজের টাকা দেয়ার পর উৎপাদন খরচই ওঠেনি। বাধ্য হয়ে লিজের জমি ফেরত দিয়ে অন্য কাজ করতে বাধ্য হয়েছি।
বহরমপুর ইউনিয়ানের বগুড়া গ্রামের কৃষক শামসুল হক তালুকদার জানান, এক মণ ধান উৎপাদন করতে প্রায় ৭০০টাকা খরচ আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৭০/৬০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি মণ ধানে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে ১০০টাকা । উপজেলার ঢনঢনিয়া গ্রামের কৃষক হাবি খাঁ বলেন, এক মণ ধান বিক্রি করে আজকাল এককেজি মাংসও কেনা যায় না গত সোমবার সকালে কালাইয়া এক মণ ধান ৫৭০ টাকায় বিক্রি করে বাজারে গিয়ে দেখি এককেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়। বাধ্য হয়ে মাংস না নিয়ে খালি হাতেই বাড়িতে ফিরে আসি। অন্যদিকে বাজারে দাম কম থাকায় কৃষকদের বুকে চাপা কান্না। তারা রীতিমতো হতাশ। বর্তমানে বর্গা চাষিরা ধানের আবাদ করে উৎপাদন খরচ তুলতে না পারার কারণে তারা আর ধান চাষ করবে না। যেহেতু খরচের তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে কম। জমির মালিক কে চুক্তির টাকা বা ধান দিয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে খরচের টাকা ও থাকছে না তাদের। যে কারণে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। সাধারন কৃষকরা ও ধান বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা বলছে এ লোকসান দিয়ে ধানচাষ করা সম্ভব না। ফলে তারা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। এ বিষয়ে দশমিনা সচেতন মহল বলছে ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক। কোনো কোনো অঞ্চলে ধান চাষের বদলে পান চাষে ঝুঁকছে তারা। এতে জনস্বাস্থ্য ও কৃষি জমির ওপর পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এ অবস্থা চলতে থাকলে সোনালি আঁশ পাটের মতো ধান চাষও কমে যাবে, দেশ হয়ে পড়বে আমদানি নির্ভর। তখন জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ বনি আমিন খান বলেন, সরকারী ভাবে যদি আরও বেশি ধান ক্রয় করে তাহলে চাষীরা নায্য মুল্যে পাবে। এবং আগামীতে ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে।
এসবি/এমআর