আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আইন ও নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বরগুনার আমতলী-তালতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে গড়ে তুলেছেন ইটভাটি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে আতাত করেই ইটভাটির মালিকরা অবৈধভাবে ইটভাটি নির্মাণ করেছেন এমন অভিযোগ কৃষকদের। ইটভাটির মালিকরা নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করছে না। এতে ফসলি জমি এবং পরিবেশ মারাত্ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । এ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ফসলি জমি ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে। দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানাগেছে, কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় ফসলি জমিতে ইটভাটি না গড়ার আইন থাকলেও অবৈধ ইটভাটি মালিকরা তা মানছে না। বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি অফিসের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়া ২৭ টি ঝিকঝ্যাঁক, ড্রাম চিমনি (ব্যারেল) ও পাজা ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করেছে। স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনির ইটভাটি স্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানী হিসাবে অনেক ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের জন্য গ্রামাঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে স্তুপ করে রেখেছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির আশঙ্কা করেছে পরিবেশবাদীরা। কৃষি জমিতে ইটভাটি নির্মাণ করায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি।
ইট প্রস্তুত ও ভাটি স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর ৮ ধারা অনুযায়ী কৃষি জমি, আবাসিক এলাকায় ভাটি স্থাপন দন্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটি স্থাপন করাও নিষিদ্ধ। যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ৮-এর উপধারা (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ইটভাটির মালিকরা এ সকল আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কৃষি জমি, লোকালয় ও গ্রামীর সড়কের পাশে ইটভাটি নির্মাণ করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন দেখেও এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা নিরব ভুমিকা পালন করছে।
আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী, আঠারগাছিয়া ইউনিয়ন ও তালতলী উপজেলার ছোটবগী, সোনাকাটা ও কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নে ২৭ টি ঝিকঝ্যাঁক ও ড্রাম চিমনি ইটভাটিতে ইট পোড়াচ্ছেন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, আমতলী-কুয়াকাটা মহাসড়কের সেকান্দারখালী নামক স্থানে এসইউএবি, এমএসবি, কেএবি ও জিমিসহ ইটভাটি ধান ক্ষেতের মধ্যে ঝিকঝ্যাঁকের চুল্লী নির্মাণ করে মাটি কেটে ইট পোড়াচ্ছে। আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের বাদুরা নামক স্থানের ধান ক্ষেতের পাশে ডিবিএম ঝিকঝ্যাঁক ইটভাটি ইট পোড়ানো হচ্ছে। আমতলী পৌরসভা সংলগ্ন চাওড়া ইনিয়নের উতশিতলা এলাকার আকন ব্রিকস চারিদিকে ধান ক্ষেত তার মধ্যে ইট পোড়াচ্ছে। চালিতাবুনিয়া পাতাকাটা সড়কের পাশে এইচবিএম ড্রাম চিমনি ইট ভাটির চারিপাশে ধান ক্ষেত। ইট পোড়ানের কারনে ক্ষেতে তেমন ধান হয়নি। ইট পোড়ানোর জন্য কাঠ স্তুপ করে রেখে দিয়েছেন ড্রাম চিমনি ইটভাটিরা মালিকরা।
পাতাকাটা গ্রামের কৃষক মোঃ ফিরোজ, মোঃ শহীদ, রাকিব বলেন, ইট ভাটির কারনে ক্ষেতে তেমন ধান হয়নি। ফসল রক্ষায় দ্রুত ইট ভাটিটি সরানোর দাবী জানাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উতশিতলা গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটি নির্মাণ করায় যেমন ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তারা আরো বলেন, এর প্রভাবে অনেক ক্ষেতে তেমন ধান হয়নি। দ্রুত ইটভাটি সরানোর দাবী জানাই।
আমতলী পৌরসভা সংলগ্ন চাওড়া উতশিতলা এলাকার ঝিকঝ্যাঁক আকন ইটভাটির মালিক মোঃ কামাল আকন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ইট ভাটির কাজ শুরু করেছি। তিনি আরো বলেন, আমার ইট ভাটির চারিপাশে কোন ফসলি জমি নেই।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিম রেজাউল করিম বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটি নির্মাণ করায় যেমন ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ফসলেরও মারাত্ত্বক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি জমিতে ইটভাটি নির্মাণের জন্য আমি কাউকে প্রত্যায়নপত্র দেইনি। আমার প্রত্যায়নপত্র ছাড়াই তৈরি হচ্ছে ইটভাটি।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগ পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবদুল হালিম বলেন, আমতলীর অধিকাংশ ঝিকঝ্যাঁক ইটভাটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেয়া হয়ছে। কিন্তু ড্রাম চিমনি ইটভাটিতে কোন ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, ধান ক্ষেত অথবা ফসলি জমিতে কেউ ইটভাটি নির্মাণ করতে পারবে না। যারা ধান ক্ষেতে ইটভাটি নির্মাণ করেছে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটি নির্মাণ করা যাবে না। ফসলি জমিতে ইট ভাটিগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর