বানারীপাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বানারীপাড়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোটারদের বিভিন্ন ভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগে সাময়িক ভাবে কমিটি গঠন স্থগিত করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। ফলে ২১ নভেম্বর বিকেল ৩টায় বানারীপাড়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। একই ভাবে ২৩ নভেম্বর বিকেলে সৈয়দকাঠী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আদৌ অনুষ্ঠিত হবেকি না এনিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মন্ত্রী পদমর্যাদার দায়ীত্বে থাকা আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্ এমপিকে এ বিষয়টি অবহিত করার পর সম্মেলনের পরবর্তী দিনক্ষন ঠিক করা হবে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
অপরদিকে ১৯ নভেম্বর বিকেলে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক মিন্টু অনুসারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক পদের প্রার্থীরা মধ্য রাত পর্যন্ত সেখানে ভোট দেয়ার দাবীতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক আশ্রাফুল ইসলাম ২১ নভেম্বর সকাল ১০টায় কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহনের মাধ্যমে ওই ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচন করা হবে বলে তাদেরকে শান্ত করেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সেখানে তারা কাউন্সিলরদের নিয়ে অপেক্ষা করেন। পরে তারা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দর কাছ থেকে মোবাইল ফোনে জানতে পারেন যে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক সহ দলীয় নেতৃবৃন্দ সেখানে যাচ্ছেন না। এ সময় তারা সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও ভোট দেয়ার দাবীতে উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালায়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল-মাবেশ করেন। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী আব্দুস সালাম, সম্পাদক প্রার্থী সালাউদ্দিন সোহাগ, ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান প্রমূখ। এ সময় বক্তারা বলেন, সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোট না দেয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না।
এবিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা বলেন, ১৯ নভেম্বর বিকেলে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানে বরিশাল-২ আসনের এমপি মো.শাহে আলম সহ আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলাম। এ সময় সভাপতি পদে ওই ইউনিয়নের প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা (অবঃ প্রধান শিক্ষক) মো. ছিদ্দিকুর রহমান ও শাহ্ মাহামুদিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সালাম সহ ৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ.কে.এম ইউসুফ আলীর ছোট ভাই বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান সহ ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। আমরা আগে থেকেই অভিযোগ পেয়ে ছিলাম, প্রার্থীরা কাউন্সিলে আসা ভোটারদের বিভিন্ন ভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। এর আগেও আমরা অন্য দু’টি ইউনিয়নে কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচন করেছি। কিন্তু সেখানেও বিজয়ী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রভাবিত করা হলে, প্রভাব বিহীন ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা তাদের কাঙ্খিত পদ না পেয়ে বাদ পড়ে যেতে পারেন। আমরা এসব দিক বিবেচনা করে, দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের যোগ্য ও ত্যাগী নেতা হিসেবে প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা (অবঃ প্রধান শিক্ষক) মো. ছিদ্দিকুর রহমান ও শাহ মাহামুদিয়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম তালুকদারকে তাদের যোগ্যতার আলোকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যে কোন একটি পদে নেয়ার প্রস্তাব দিলে তারা দু’জনেই সেটি অকোপটে মেনে নেন। এছাড়াও অন্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে যারা বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি বিরোধী দলের মামলা হামলার শিকার হয়েছেন, সেই সমস্ত ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন করার জন্য আমরা উপস্থিত নেতা-কর্মীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সভাপতি পদে ওই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সালাম ও সম্পাদক পদে বিগত সময়ে ওই পদে সততার সাথে দায়ীত্ব পালনকারা ত্যাগী নেতা ফারুকুজ্জামানকে এবং ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক সালাউদ্দিন সোহাগকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী পদ নেয়ার ঘোষনা দেন বলেও মঞ্জু মোল্লাহ জানান।
এদিকে ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক সালাউদ্দিন সোহাগ জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের দেয়া সিদ্ধান্ত তিনি সহ তার সমর্থিত দলীয় নেতা-কর্মীরা মেনে না নিয়ে ভোট দেয়ার দাবী জানিয়ে ওই দিন রাত দেড়টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক আশ্রাফুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের বরাত দিয়ে ২১ নেভেম্বর সকাল ১০টায় সভাপতি-সম্পাদক পদে কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষনা দেন। এ বিষয়টি অশ^ীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা বলেন, আমি এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা সহ দলীয় নেতৃবৃন্দ সেখানে থাকা অবস্থায় ওই ধরনের কোন ঘোষনা দেয়া হয়নি। তবে দু’এক দিনের মধ্যে এ বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মন্ত্রী পদমর্যাদার দায়ীত্বে থাকা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপিকে অবহ্নিত করার পর তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমরা সে ভাবেই সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের নেতা নির্বাচন করব বলে মঞ্জু মোল্লাহ জানান।
এদিকে ৫ নভেম্বর উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ওই দিন সে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। এর কারণ হিসেবে বিশারকান্দি ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বিশারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল’র আগের দিন রাত থেকে ভোটারদের বিভিন্ন রকম লোভনীয় অফার ও উপটোকন দেয়ার অভিযোগ ওঠার পাশাপাশি ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতে বেশ কয়েক জন বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মীকে কাউন্সিলর (ভোটার) কারার কারণে এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাক্ষর ও অনুমতি বিহীন ওয়ার্ড কমিটি দিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা চেষ্টা করা হলে প্রথম অধিবেশন শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লাহ ও সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা উক্ত কাউন্সিস্থল ত্যাগ করেন। ফলে ওই দিন তারা সেখানের কাউন্সিল স্থগীত রাখেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মন্ত্রী পদমর্যাদার দায়ীত্বে থাকা আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্ এমপির নির্দেশে লবন সাড়া মুন্সি বাড়িতে ওই ইউনিয়নের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ওই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদক’র ভোটে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন সভাপতি হিসেবে ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো.শাহজাহান ও সমাপাদক পদে জামাল পারভেজ নির্বাচিত হন। পরে ওই ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক উক্ত সম্মেলন বাতিল দাবী করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মন্ত্রী পদমর্যাদার দায়ীত্বে থাকা আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো.ইউনুস’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
পরে ১৭ নভেম্বর বিকেলে চাখার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে সভাপতি পদে উপজেলা কৃষক লীগের সভআপতি মালেক হালদার ও সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান মিলন নির্বাচিত হন। এর পরদিন ১৮ নভেম্বর বিকেলে ইলুহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে সভাপতি পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইলুহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম এবং সম্পাদক পদে যুবলীগ নেতা সোহেল শিকদার নির্বাচিত হন। ওই সম্মেলনে ভোটারদের বিভিন্ন ভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠার কারণে ত্যাগী নেতারা বাদ পরে যান বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানান।
এ বিষয়ের সত্যতা শিকার করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা বলেন, কাউন্সিলে ভোটারদের বিভিন্ন রকম লোভনীয় অফার দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ পরবর্তীতে আমরা তদন্ত করে দেখবো বলে জানান।
জিএমআর/এমআর