কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
কলাপাড়ায় ধানখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের এখন উল্টো দাবড়ে বেড়াচ্ছে হাইব্রিড কিংবা অনুপ্রবেশকারীরা। সব কয়টি সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ভোট পায় আওয়ামী লীগ। এখানে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট চালু হবে। আরও অন্তত চারটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এখন যুবদল থেকে হঠাৎ আসা এক ধনকুবের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। যদিও তার প্রবেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগে। তারপরও মূল দল আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডের এখন প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে অভিযোগ সেখানকার ত্যাগী নেতাকর্মীদের।
তৃণমূলের ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠণ করতে গিয়ে অনুপ্রবেশকারী শাহজাদা পারভেজ টিনু মৃধার অনুসারিদের রোষানলে পড়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ওই ইউনিয়নের সম্মেলন স্থগিত রাখার দাবি করে আসছেন। রহস্যজনকভাবে বনে যাওয়া ধনকূবের অর্থের কাছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা দিশেহারা। হঠাৎ গেল বছর ইউপি নির্বাচনে এ যুবদলের নেতা নিজে ছাড়াও বাবা বর্তমানে বিএনপির মূল দলের নেতা থাকা সত্ত্বেও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কারিশমায় ঢুকে যায় দলে। এরপরে তৃণমূলের ভোটে প্রথম হওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ তালুকদারকে টেক্কা দিয়ে নমিনেশন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়েছেন। কিন্তু তৃণমূলের ভোটাররা তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ফিরিয়ে দেন। পরাজিত হন। ভরাডুবি ঘটে। কিন্তু এর দাপট, অর্থ প্রতিপত্তির কাছে আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ত্যাগী নেতাকর্মীরা নিগৃহীত হয়ে আসছেন।
অভিযোগ রয়েছে বিএনপির সময় সারের ব্যবসায় নামেন। সুদের ব্যবসায়ী হিসেবে ধানখালীতে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। বিগত ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে পুলিশের বন্দুক ছিনতাইয়ের ঘটনায় তার বাবা গ্রেফতার হয়েছিলেন। টিনু মৃধা নিজে সার পাচারের অভিযোগে সাজা খেটেছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগে অনুপ্রবেশকারী হয়ে আওয়ামী লীগের দূর্গখ্যাত ধানখালীতে ঢুকে গেছেন। এর এতো বিত্ত-বৈভব নিয়েও রয়েছে রহস্য।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম শহীদুল আলম, ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বিশ^াস, সহ-সভাপতি ওহাব মৃধাসহ অধিকাংশ নেতাকর্মীরা লিখিত অভিযোগে জানান, সাত নং ওয়ার্ড যুবদলের ২ নম্বর সদস্য টিনু মৃধা নিজেসহ তার বাবা আলতাব হোসেন মৃধা তিন নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। ভাই আপেল মৃধা ও বাবু মৃধা বিএনপির নির্বাচনী সেন্টার সংগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন। এমনসব লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠিয়েছেন। ইউনিয়নটির ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রসহ উপজেলা জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তের প্রতি। সবাই চায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এমনসব হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারী দলের মধ্যে যেন প্রবেশ করতে না পারে এর সঠিক বাস্তবায়ন। কিন্তু ওয়ার্ড কমিটি গঠনকালে প্রচার কাজে ব্যবহৃত মাইকসহ সরঞ্জাম ভাংচুরের পরে নেতাকর্মীরা এখন শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগের দূর্গখ্যাত ধানখালী ইউনিয়নের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন হাইব্রিডমুক্ত কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জেলা উপজেলাসহ কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। রবিবার বেলা ১১টার দিকেও ধানখালী কলেজে এ নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘাত ঘটতে যাচ্ছিল। অভিযুক্ত শাহজাদা পারভেজ টিনু মৃধা জানান,তিনি হাইব্রিড নন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের। তার চাচা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিযোগকারীরা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। কখনই যুবদল করেননি বলে তার দাবি। কাগজপত্র বানানো। আর সারের ব্যবসা করেন, মানুষকে উপকার করেন। এতে সবার চক্ষুশূল হয়েছে। বিগত নির্বাচনে ইউনিয়নে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছেন তারাই তাকে হয়রাণি করতে এসব করেছেন। আর ১/১১ এর সময় তার গুদামের স্টকে থাকা সার জব্দ করেছিল প্রশাসন। এসব ছিল বৈধ। সব তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত বলেও তিনি দাবি করছেন। তিনি এখন ধানখালী শীর্ষ ১৫০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মধ্যে এক নম্বরে রয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান জানান, ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকর্মীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে টিয়াখালী ইউনিয়নের সম্মেলন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। ধানখালী থেকে আবেদন পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা মতে সাংগঠনিকভাবে সব করা হবে। তবে তিনিও সম্মেলনকে নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন।
এমইউএম/এমআর