মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
চাকামইয়া বেতমোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে এ বছর (২০১৯) জানুয়ারিতে ভর্তি ছিল ৬৫ জন শিক্ষার্থী। অথচ জেএসসি পরীক্ষা দিবে ৩৭জন। ২৮ জন ঝরে গেছে। বলতে গেলে লাপাত্তা।
প্রধান শিক্ষক মোঃ মোতালেব সিকদারের দাবি, বাল্যবিয়ে, দারিদ্র্য, শ্রমজীবী পরিবারের এসব সন্তান জীবীকার প্রয়োজনে কর্মজীবনে চলে গেছে। এভাবে হাজী আব্দুস সোবাহান একাডেমিতে ভর্তি ছিল ৮১ জন। অথচ জেএসসি পরীক্ষার্থী মাত্র ৩৮ জন। নেই ৪৩ জন। অর্ধেকেরও বেশি উধাও। মধ্যটিয়াখালী একেএইচএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ছিল ৬০ জন। ফরম ফিলাপ করেছিল ৪৮ জন। অথচ পরীক্ষা দিবে মাত্র ৪৩ জন। প্রধান শিক্ষক জানালেন, শ্রমজীবী পরিবারের এসব অনুপস্থিত কিশোর শিক্ষার্থীর অধিকাংশ ঢাকায় চলে গেছে। শিক্ষার্থী নিরব, হাসিব ও তানজিলার নামও বললেন, যারা ঢাকায় গেছেন। প্রধান শিক্ষক জানালেন কেউ কেউ জীবীকার সন্ধানে অটো বাইক চালায়। আগামী ২ নবেম্বর জেএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। লালুয়া জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ছিল ১৩৬ জন। পরীক্ষা দেয়ার কথা ১২৭ জন। নেই নয় জন। প্রধান শিক্ষকের দাবি দরিদ্র জেলে পরিবারের এসব শিক্ষার্থী জীবীকার প্রয়োজনে স্কুল ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। রয়েছে কর্মক্ষেত্রে।
একই দশা উত্তর লালুয়া ইউসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেখানে জানুয়ারিতে ভর্তি ছিল ৬৮ জন। অথচ পরীক্ষার্থী ৫৪ জন। নেই ১৪ জন। এভাবে পূর্বমধুখালী স্কুলে ভর্তি ছিল ৭০ জনে পরীক্ষার্থী ৪৭ জন। ফরিদগঞ্জ স্কুলে ৬০ জনের মধ্যে পরীক্ষা দেয়ার কথা ৫২ জনের। নেই ৮ জন। মুসুল্লিয়াবাদ একে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জানুয়ারিতে ভর্তি ছিল ৯০ জন। এখন পরীক্ষার্থী রয়েছে ৮৩ জন। আবু হানিফ নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ছিল ৪৮ জন, পরীক্ষার্থী ৩৭ জন। লোন্দা হাফিজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ছিল ৭৫ জন। পরীক্ষার আগ্ইে নেই ১২ জন। ধানখালী এসএইচ এন্ড আশ্রাফ একাডেমীতে ভর্তি ছিল ১০৭ জন। পরীক্ষার আগেই ঝরে গেছে ৭ জন। চরচাপলী ইসলামি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই ২৭ জন। ডালবুগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নয়জন ঝরে গেছে। স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকদের দেয়া তথ্যানুসারে ৩৩টি বিদ্যালয়ে এ বছর জানুয়ারিতে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি ছিল ২৯৭৬। বছর শেষে জেএসসির পরীক্ষার্থী সংখ্যা দাড়িয়েছে ২৭৩৭ জন। এর মধ্যে ৮৮ জন ক্যাজুয়াল। এ হিসেবে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৪৯। ভর্তির হিসেব থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ঝরে গেল ৩২৭। এভাবে জেএসসিতে কলাপাড়ার ২৯টি মাধ্যমিক ও চারটি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি পরীক্ষার আগে এক বছরে ঝরে গেল অন্তত ৩২৭ জন শিক্ষার্থী। এনিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেউ কেউ মনে করছেন এর সংখ্যা আরও বেশি। পরীক্ষায় অনুপস্থিতি থাকবে আরও কিছু শিক্ষার্থী। অধিকাংশ শিক্ষকের দাবি শ্রমজীবী পরিবারের ছেলে শিক্ষার্থীরা সংসারের যোগান দিতে কাজে চলে গেছে। ছেলেরা জেলে কিংবা কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। আবার কেউ ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্ট কর্মী হিসেবে কাজ করছে। আবার মেয়ে শিক্ষার্থীর একটি অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, বিষয়টি উদ্বেগজনক। খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান জানান, সঠিক কারণ জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এমইউএম/এমআর